এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে কয়েক মাস ধরেই চড়া পেঁয়াজের বাজার। তবে মাসখানেক আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, শর্ত শিথিল এবং শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়। প্রতিবেশী দেশটির এমন উদ্যোগে ধারণা করা হয়েছিল, দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বরং দাম কিছুটা বেড়েছে। খোদ উৎপাদন এলাকাতেই বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছরে ডলারের দর অস্বাভাবিক বেড়েছে। কৃষকের ঘরেও পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসছে। তাছাড়া ভারত এখনও রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। রপ্তানি সহজ করলেও দেশটিতে দাম এখনও বেশি। ৯ অক্টোবর থেকে টানা ছয় দিন পূজার কারণে বন্ধ থাকবে আমদানি। এসব কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি। অন্যদিকে, কৃষকরা আরও দামের আশায় হাটে দেশি পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। এটিও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা হতাশ হলেও খুশি কৃষক। স্থানীয় পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, দাম বেশি পেলে কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ পাবেন। তাতে দেশে উৎপাদন বাড়বে, যা সহায়ক হবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে। যদিও বৃষ্টিতে এবার আগাম উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আগাম পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা কম।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে দেখা গেছে, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। মাস দুয়েক ধরে এ দরের আশপাশেই ঘুরছে পেঁয়াজ।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আকাশ মিয়া বলেন, যেসব এলাকা থেকে ঢাকায় পেঁয়াজ আসে, সেসব জায়গায় এখন দর বেশি। বাজারে প্রতিদিনই অভিযান হয়। খুব সীমিত লাভে এখন ব্যবসা
করতে হয়।
আকাশের তথ্যের মিল পাওয়া গেছে উৎপাদন এলাকা পাবনার পেঁয়াজের বাজারের চিত্র দেখে। ‘পেঁয়াজের ভান্ডার’ বলে পরিচিত এ জেলার সাঁথিয়া উপজেলা। কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সাঁথিয়ায়, যা মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ।
শুক্রবার সরেজমিন সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী ও করমজা চতুরহাটে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। দেশি পেঁয়াজ পাইকারি প্রতি মণ ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে প্রতি মণ ছিল ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরায় কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, দুর্গাপূজার কারণে গত বুধবার থেকে ছয় দিনের জন্য হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকার খবরে দাম বেড়েছে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ একেবারেই কমে এসেছে। সাঁথিয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ শুরু হবে। নতুন পেঁয়াজ উঠতে অন্তত আড়াই মাস লাগে। সেই পর্যন্ত দাম কমার তেমন আশা নেই।
দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছেন। সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আবু জাফর বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আবাদে লোকসান হইছে। এবার ভালো লাভ পাইছি। ঘরে যা পেঁয়াজ ছিল, তা বেইচা শেষ করছি। মাসখানেকের মধ্যে যাতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করতে পারি, সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
দাম বাড়ার ব্যাপারে রাজধানীর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও পেঁয়াজ আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, পূজার কারণে টানা পাঁচ দিন আমদানি বন্ধ থাকবে। ভারত সরকার এখনও রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রেখেছে। সেজন্য ভারত থেকে আগের মতো কম দরে আনা যায় না। আমদানি করলে দ্বিগুণ খরচ হয়। এসব কারণে দর কিছুটা বেশি। তবে এ দর বেশি দিন থাকবে না।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ বলেন, ভারতেই এখন দর বেশি। আমদানি করলে খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ৮৫ টাকার মতো পড়ে। কয়েকটি হাত বদল হয়ে তা ঢাকায় ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে ১০০ টাকা পার হয়ে যায়।