এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে রাজধানীর বাজারে কমেছে ইলিশের দাম। ইলিশ কিনতে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মিলছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়ত ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ইলিশ রক্ষায় প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে এবার ১৩ অক্টোবর (শনিবার রাত ১২টার পর থেকে) থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুতও নিষিদ্ধ থাকবে।
মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা, শেষ মুহূর্তে কমেছে ইলিশের দাম, ক্রেতাদের ভিড়
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ কিনতে প্রচুর ক্রেতার ভিড়। দামও আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের (১ কেজি ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম) ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। এক কেজির ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। আগে এ ইলিশের কেজি দুই হাজার টাকার বেশি ছিল।
৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। চারটিতে (এক একটি ২৫০ গ্রাম) এক কেজি হয় এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক একটি ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।
আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপারীরা হাঁক-ডাক দিচ্ছেন, নিলাম হচ্ছে। অন্যান্য দিনের থেকে ক্রেতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিক্রেতারা বলছেন, আড়তের বেচা-বিক্রি সাধারণত ভোর কেন্দ্রিক। সকাল ৯টা-১০টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজ রাত থেকে যেহেতু ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই সন্ধ্যার পর ইলিশের শেষ বেচা-বিক্রি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ইলিশের দাম সকালের তুলনায়ও কম বলে জানিয়েছেন তারা।
মাতুয়াইলের দক্ষিণপাড়া থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন আল হাসান। তিনি বলেন, ইলিশের দাম অত্যধিক বেশি থাকায় এ বছর খুব একটা ইলিশ কেনা হয়নি। কাল থেকে ইলিশ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই আসলাম শেষ মুহূর্তে কিছুটা সস্তায় পাওয়া যায় কি না। অন্য সময়ের তুলনায় দাম কমেছে এটা ঠিক, কিন্তু খুব বেশি কমেনি। দামদর করছি, মিলে গেলে নিয়ে নেবো।
বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, কালকে থেকে আর ইলিশ বিক্রি হইবো না। তাই যার কাছে যা আছে সব বিক্রি করে দিচ্ছে। দাম অনেক কমছে। সকালেও দাম বেশি ছিল।
তিনি বলেন, এবার ইলিশের আসছেই অনেক কম। যেখানে বাজারের বেশিরভাগ অংশ ভরা থাকতো ইংলিশে, সেখানে মাত্র কয়েক ঘরে ইলিশ বিক্রি হইছে। তাই দামও কমেনি।
১৯৫০ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন (প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ফিস অ্যাক্ট, ১৯৫০) অনুযায়ী প্রতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে একটি নির্দিষ্ট সময় ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
১৯৮৫ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধি (প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ফিস রুলস, ১৯৮৫) অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।
নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন। নিষিদ্ধ সময়ে সারাদেশের মাছের ঘাট, মৎস্য আড়ত, হাট-বাজারে অভিযান চালানো হবে। প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে বিভিন্ন টিম গঠন করে দেশব্যাপী চলবে তদারকি।