বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০২:৪৯

এবার কী তাহলে সরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন?

এবার কী তাহলে সরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এসব প্রস্তাবে পৌরসভা বিলুপ্তি, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন বাতিল, সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী ও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা চলছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী করতে শর্টকার্ট কোনো পদ্ধতি নেই। আমরা তৃণমূল থেকে নানা মতামত গ্রহণ করছি, যার মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে।

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ প্রতিবেদনে ৪৯ হাজার মানুষের মতামত ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা পরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হবে। ১৯৭০ সালে দেশের প্রথম পৌরসভা বিলুপ্ত করা হয়েছিল, এবং সেখান থেকে নতুন মাত্রায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

আগের মতো সরাসরি মেয়র নির্বাচন হবে না, এখন কাউন্সিলরদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবে। এর মাধ্যমে একক ক্ষমতার ব্যবহার কমবে এবং স্থানীয় সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।

পৌরসভা বিলুপ্তির কারণ
বর্তমানে দেশে ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এসব পৌরসভায় ৩০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। তবে বেশিরভাগ পৌরসভার আয়ের পরিমাণ এত কম যে তারা সরকার নির্ধারিত বেতন স্কেলে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে, এসব পৌরসভা কার্যকরী হতে পারছে না এবং সরকারী অনুদান ছাড়াই এগুলো পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষত, রাজনৈতিক কারণে গঠিত কিছু পৌরসভা নিজেদের আয় থেকে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একশোর বেশি পৌরসভা বর্তমানে অচল অবস্থায় রয়েছে। ফলে এসব পৌরসভার বিলুপ্তির সুপারিশের কথা উঠছে, তবে তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনেকগুলো পৌরসভা বিলুপ্তি হলে, সেগুলো ইউনিয়ন বা উপজেলা এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

নির্বাচনী পদ্ধতিতে পরিবর্তন
বর্তমানে দেশে স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, জেলা পরিষদ ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তবে সংস্কার কমিশন বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনে আরও বড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। বিশেষত, সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে ভোট না নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এই পরিবর্তনের ফলে, কাউন্সিলর বা মেম্বারের নির্বাচন হওয়ার পর, তাদের ভোটেই মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘আগের মতো সরাসরি মেয়র নির্বাচন হবে না, এখন কাউন্সিলরদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবে।’ এর মাধ্যমে একক ক্ষমতার ব্যবহার কমবে এবং স্থানীয় সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।

আমরা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সকল বাধা তুলে দেব, যাতে সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারেন। এই পরিবর্তনটির মাধ্যমে, সেবা প্রদানে আরও ভালো এবং যোগ্য কাউন্সিলর পাওয়া যাবে, যারা স্থানীয় সরকারের কাজ আরও দক্ষতার সাথে করতে পারবেন।

কমিশন মনে করছে—একই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে ভোট আয়োজন করা সম্ভব হবে। যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে একসঙ্গে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ‘এমন পরিকল্পনা প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

এছাড়াও, কমিশন যে প্রস্তাবনা তৈরি করবে, তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার বিষয়টিও থাকবে। এটি ভোটের প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার চেষ্টা হবে।

সরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন?
বর্তমানে বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীরা স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তবে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এই বিধি শিথিল করার প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে। তারা মনে করছেন— নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর আর কোনো বাধা থাকতে পারে না। কমিশন মনে করে, এতে কর্মক্ষম, শিক্ষিত এবং দক্ষ প্রতিনিধিদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হবে।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সকল বাধা তুলে দেব, যাতে সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, এই পরিবর্তনটির মাধ্যমে, সেবা প্রদানে আরও ভালো এবং যোগ্য কাউন্সিলর পাওয়া যাবে, যারা স্থানীয় সরকারের কাজ আরও দক্ষতার সাথে করতে পারবেন।

স্থানীয় সরকারে আরও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
কমিশন অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথাও ভাবছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিধান বাতিল করা, এবং সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করার বিধান। এসব পরিবর্তন বাস্তবায়ন হলে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় শক্তিশালী সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে।

যদিও কমিশন এসব সংস্কারের পরিকল্পনা করছে, তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান মনে করেন, এক দিনে সব নির্বাচনের আয়োজন করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তিনি জানান, ‘যত নিচের স্তরের ভোট হয়, তত বেশি সহিংসতা দেখা যায়, বিশেষ করে ইউনিয়ন বা পৌরসভা নির্বাচনে। তাই একই দিনে সব নির্বাচনের আয়োজন করা কঠিন হতে পারে।’ সূত্র: বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে