বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:২৪:০৬

'বড় মেয়েটা বাবাপাগল ছিল, এখন সবসময় বলে বাবা আসেনা কেন? উত্তর দিতে পারি না'

 'বড় মেয়েটা বাবাপাগল ছিল, এখন সবসময় বলে বাবা আসেনা কেন? উত্তর দিতে পারি না'

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গত বছরের জুলাই ও আগস্টে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটায় ছাত্র-জনতা। আপামর জনসাধারণ যে ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করে, তাতে বড় ভূমিকা ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের। ওই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। নানা সংকটে ধুঁকছে তাদের পরিবার।

১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে প্রিয়জন হারানো এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা কালের কণ্ঠ। তাদের বিনম্র্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকাটি। 

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দুই দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এই পাঁচজন শহীদ সাংবাদিকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। যার মধ্যে ছিলেন ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী।

এই শহীদের পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি। তাঁর হাতে দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এছাড়াও ৫ শহীদের পরিবারকে এক কোটি টাকা প্রদাণের ঘোষণাও করেন আহমেদ আকবর সোবহান।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজকে আনন্দঘন মুহূর্তে পাঁচজন সাংবাদিককে ১ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।

নিহত সাংবাদিকের পরিবারের পাশে বসুন্ধরা থাকবে।’ নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের সঙ্গে সমবেদনা জানান তিনি।
সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, ‘নিহত সাংবাদিকদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাদের অবদানে আজ আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। তাদের অবদান ভুলে যাওয়ার নয়। এসব তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের দাবি করেন।

হাসান মেহেদীর স্ত্রী পপি সহায়তা গ্রহণ করে বলেন, ‘আমরা সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী আজ নেই। তাকে খুব কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়েটা বাবাপাগল ছিল। যেখানেই যেত বাবার সাথে যেত। এখন সবসময় বলে বাবা আসেনা কেন? আমার মেয়ের প্রশ্নের আমি উত্তর দিতে পারি না। তার বাবার অফিসের সহকর্মীরা এলেও প্রশ্ন করে, বাবা আসবে কবে?

কান্নারত কণ্ঠে পপি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘তারা কি গুলি করার আগে একটাবার ভাবল না, এই সন্তানদের আমি কিভাবে মানুষ করবো? তাদের কি সন্তান নেই ঘরে? আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন বাচ্চা দুটোকে মানুষ করতে পারি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এলাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী (৩২)। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউয়িনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হোসনাবাদ গ্রামে। বাবা মোশারেফ হোসেন (৫৫) স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড সভাপতি। স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি (২৫), দুই মেয়ে নিশা আক্তার (৩) ও আনিশাকে (সাত মাস) নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন মেহেদী।

কালের কণ্ঠের জন্মবার্ষিকীতে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক হাসান হাফিজ, নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপ-মহাপরিচালক কাদের গনি চৌধুরী, প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন পাভেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের ও নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মেনেজিং এডিটর রুহুল আমিন রাসেল, বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেলসহ অনেকে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে