এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কারাগার থেকে চিঠি লেখার ঘটনা চলচ্চিত্রে দেখা গেলেও বাস্তবে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে এবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি কারাগার থেকে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরকে হৃদয়স্পর্শী একটি চিঠি লিখেছেন।
গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) চিঠিটি গণমাধ্যমে আসে। চিঠিতে ওই আসামি লেখেন, ‘আমি একজন অসহায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাদক (কোকেন) মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আমি ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট থেকেই খুলনা জেলা কারাগারে আছি। এই চিঠি আমার স্ত্রীর মাধ্যমে আপনার বরাবর পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো আমার এই মামলায় আমার ডিফেন্স কেস সুস্পষ্টভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা সত্ত্বেও বিজ্ঞ বিচারক মামলার সাক্ষী, জেরা, জবানবন্দি সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করে আমাকে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘এ মামলায় আমার কোনো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই।
আমার নামে আগে-পরে কোনো মাদকসংক্রান্ত মামলা নেই। আমি অত্যন্ত গরিব বিধায় যারা এই মামলায় জড়িত তাদের আসামি না করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে বিজ্ঞ বিচারক সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’
চিঠিতে ওই কারাবন্দী লেখেন, ‘আপনার কাছে আমার দৃঢ় আর্তনাদ আমার ডেথ রেফারেন্স মামলাটি উচ্চ আদালতে (হাইকোর্টে) নিজেই শুনানি করতে চাই এবং সেই বিষয় কোনো আইনগত সুযোগ আছে কি না? আপনার কাছে জানার দৃঢ়ভাবে আর্তনাদ রইল।
আমার মামলার নথি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে কোনো সচেতন বিচারক আমাকে দণ্ড দিতে পারবেন না। আর একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানে শুধু ওই ব্যক্তিকে নয়, তার পুরো পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।’
উচ্চ আদালতের প্রতি আমার জোর আকুতি থাকবে, আমাকে শুধু তিন দিন শুনানি করার সুযোগ দেওয়া হলে নিম্ন আদালত যে বিচার করেছেন তা আমি চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দেব উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেন, ‘আর আমি যদি নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হই তাহলে উচ্চ আদালতের কাছ থেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অনুমতি চেয়ে নেব। কারণ, বিনা দোষে জেল খাটার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আমার মতো অসহায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির আর্তনাদ কেউ শুনতে চায় না।
তিনি লেখেন, ‘আমার এই আর্তনাদের কথা মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের অনেক বিচারপতিকে বরাবর আমার স্ত্রীর মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছি। এ ছাড়া মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড চেয়ারম্যান বরাবর এই আর্তনাদ জানিয়েছি কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’
কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিকাশ বিশ্বাসের লেখা চিঠির বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘চিঠিটি পড়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছি।’ চিঠিটি যুক্ত করে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপনের কথা জানান তিনি।