এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দায় নিয়ে ঢাবি প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি মেনে নিতে চার ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তারা। বিকেল চারটার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং নিজেদের অবস্থান নিয়ে ব্রিফ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং প্রো-ভিসি মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঢাবি শিক্ষার্থীদের ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে তা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পার্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সজীব উদ্দিন বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গেল রাতের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে সেটা পরেই জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রো-ভিসির সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এমন অভিযোগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করেন তারা। এ সময় প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাতে সাড়া না পেয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। উত্তেজনার একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
রাত তিনটা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় নীলক্ষেত মোড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পরে এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রাত তিনটার দিকে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল ৯টা থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সেই কর্মসূচি পালন না করে চার ঘণ্টার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয় তারা।