এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শামীম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জের ‘গডফাদার’ আখ্যা দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অহংকার ভালো জিনিস নয়। অনেক আগে একজন দুর্ধর্ষ লোক মহাসড়কের পাশে একটি ব্যানারে লিখেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অমুকের প্রবেশ নিষিদ্ধ’।
আরেকটি সভায় তিনি ডিসি-এসপির সামনে বলেছিলেন, ‘আমার নামে একটি অগ্রিম খুনের মামলা লিখে রাখেন। আমি গোলাম আযমকে খুন করতে চাই।’
কিন্তু গডফাদারের সুযোগ হয়নি তাকে খুন করার। স্বৈরাচারী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি (গোলাম আযম) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই অধ্যাপক গোলাম আযমকেই তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। যে ভাই নিষিদ্ধ করেছিলেন, আজকে তিনি কোথায়? তিনি কি নারায়ণগঞ্জে আছেন?
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান।
জামায়াতের আমির বলেন, গর্ব-অহংকার করতে নাই, দাম্ভিকতা দেখাতে নাই, ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাতে নাই, মানুষকে খুন করতে নাই, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিতে নাই, তাদের লালন করতে নাই। এই কাজগুলো যারা করে দুনিয়াতে তারা করুণ পরিণতি ভোগ করেন এবং আখিরাতের আদালতেও আল্লাহ তাদের শূলে চড়াবেন। দাম্ভিকতা পরিহার করুন, তাওবা করুন। আগে মানুষ হন, তারপর মুমিন হন।
তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে কষ্টে আছেন নারায়ণগঞ্জবাসী, নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জেও যদি চাঁদাবাজি-দখলদারি হয়, অফিস-আদালতে ঘুষ চলে, তাহলে কেন এতগুলো মানুষের জীবন গেল, কেন এত মানুষ পঙ্গু হলো, কেন এতগুলো রক্তের ফোঁটা ভাসল?
আমি বিনয়ের সঙ্গে দল-মত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে অনুরোধ করব, এই অপকর্মের সঙ্গে যারাই জড়িত আছেন, মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দিন। এই অপকর্ম করলে এই শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তাদের রক্ত দেওয়াকে অপমান করা হবে। ১৮ কোটি মানুষকে অপমান করা হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংবিধান যত অধিকার দিয়েছে, সব এ দেশে নিশ্চিত হবে। শাসনক্ষমতায় যারা যাবে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব— এটা কোনো দয়ার দান নয়। বাঁচার অধিকার, সম্মান পাওয়ার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার, সন্তানের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, কাজের অধিকারসহ সব কিছু তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন, মানবিক।
তিনি বলেন, গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেন— আমরা সবাই বাঙ্গালি। কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে, তা এখনো চলমান রয়েছে। এখনো সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তারা এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতদিন থাকবে, ততোদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, দেশের একজন নাগরিকের সব অধিকার পাওয়ার অধিকার আছে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আমাদের এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন। আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে, বিচার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ পুরোদমে ধ্বংস করে দিয়েছে।