এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পবিত্র রমজানের প্রথম সপ্তাহ পার হতেই বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমতির দিকে। ভোক্তাদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো, বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলেও এটা নিয়ে বড় কোনো সংকট তৈরি হয়নি। শুধু তা-ই নয়, খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। এছাড়া রমজানে সবসময় চাহিদার শীর্ষে থাকে এমন পণ্যগুলোর দামও কমছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, প্রতি বছর রমজান মানেই বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম চড়া থাকবে। কিন্তু এবার সয়াবিন ও লেবু বাদে অন্য পণ্যগুলোর দাম তেমন একটা বাড়েনি। এছাড়া, রমজানের এক সপ্তাহ পর এখন চাহিদা কমায় পণ্যগুলোর দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বাজারে কঠোর নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর নিউ মার্কেট, শান্তিনগর, তুরাগ এলাকার নতুনবাজার ও কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দামের এ চিত্র পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত দুই দিনে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রমজানের শুরুতে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা লিটার বিক্রি হলেও গতকাল তা ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পামঅয়েলের দামও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার পামঅয়েলে তিন টাকা কমে গতকাল বাজারে তা ১৪৭ থেকে ১৫৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকায়। এ প্রসঙ্গে তুরাগ এলাকার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, রমজানের আগে ও শুরুতে তেলের যে চাহিদা ছিল, এখন তা নেই। এছাড়া, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম কমতির দিকে।
তিনি বলেন, খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমলে এমনিতেই বোতলজাত সয়াবিনের চাহিদা কমবে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত এবার রমজানে সয়াবিন তেলের সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। তাহলে বোতলজাত সয়াবিন তেলের এই সরবরাহ সংকট থাকবে কেন?
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান গত সপ্তাহে রমজানের মধ্যে রাজধানীর কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সয়াবিন তেলের পাইকারি বা সরবরাহ পর্যায়ে কোনো ধরনের সংকট আছে কি না সেটা জানার জন্য একটু সময় প্রয়োজন। আমরা একটা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তের পর জানাতে পারব কোনো সংকট আছে কি না?
এদিকে বাজারে রমজানের এক সপ্তাহ পর চিনি, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, প্যাকেট আটার দামও কমেছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে ২ টাকা কমে ১১৮ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরও খুচরা বাজারে এক কেজি চিনির দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কমেছে পেঁয়াজের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে পাঁচ টাকা কমে তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট আটার দাম কেজিতে দুই টাকা কমে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। তবে গরুর মাংসের দাম কমেনি। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, যা মাসখানেক আগে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় পাওয়া গেছে।
এবার রমজানে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির আরেকটি বড় বিষয়, শাকসবজির দাম অনেকটা নাগালের মধ্যে থাকা। রমজানের শুরুতে লেবুর দাম চড়া থাকলেও এখন কমতির দিকে। গতকাল বাজারে প্রতি হালি লেবু আকারভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়, যা রমজানের শুরুতে ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দামও কিছুটা কমেছে।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে টম্যাটো ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, সজনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পটোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁচকলার হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।