এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : এবার শিক্ষার্থী-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা ব্যতীত অন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত রেখেছে ভারত।
সেই চিকিৎসা ভিসা প্রদানও কমে এসেছে নাটকীয়ভাবে। ২০২৩ সালে মোট ২০ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত। এই ভিসার একটি বড় অংশই চিকিৎসা ভিসা।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে প্রতি কার্যদিবসে ৫ থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশিকে চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যেক কার্যদিবসে ভিসা দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে। অর্থাৎ চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান এক পঞ্চমাংশেরও বেশি হ্রাস করেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশিই ঝুঁকছেন থাইল্যান্ড-চীনের দিকে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিতে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনানে গিয়েছেন বেশ কিছু বাংলাদেশি। বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রয়টার্সকে জানিয়েছেন এ তথ্য।
বাংলাদেশের এক কূটনীতিক এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, “যখন কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অন্যকিছু দিয়ে তা পূরণ হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত বিকল্প খোঁজে।” চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখাপাত্র জানিয়েছেন, অতি সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লোকজন আসছেন এবং চীন এই ব্যাপারটিকে দুই দেশের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির একটি চিত্র হিসেবে দেখতে আগ্রহী।
রয়টার্সকে ওই মুখপাত্র বলেন, “বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। সেসবেরই একটি অংশ এই চিকিৎসা। ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয় যে আমরা তৃতীয় কোনো দেশকে চাপে রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করছি; এমন কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আমাদের নেই; বরং এ ব্যাপারটিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটনের একটি নতুন খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”
এ ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে দুই দেশের মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন দুটি বাস্তব কারণে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা প্রদান কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। প্রথমটি হলো বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে লোকবলের অভাব। ওই কর্মকর্তা জানান, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে ফিরে এসেছেন। তাদের শূন্যস্থান এখনও পূরণ হয়নি।
আর দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক বাংলাদেশিই ভারতে প্রবেশের জন্য চিকিৎসা ভিসার অপব্যবহার করছেন। এই অপব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট এবং এদের সবার বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। “বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ধীরে ধীরে ভিসা প্রদানের ব্যাপারটি স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি,” রয়টার্সকে বলেছেন ওই কর্মকর্তা। সূত্র : রয়টার্স