জসীম উদ্দীন : রাত ৮টা থেকে একটা ট্রিপ ছাড়ার অপেক্ষায় এসডি পরিবহনে। চুয়াডাঙ্গা রুটের বাসটির ৩২ সিটের বিপরীতে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় মেলে ১৬ সিটে যাত্রী। হাঁকডাক চলতে থাকে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত যাত্রীর যেন দেখা নেই। যে কজন যাত্রী আসছেন তাদের নিয়ে একরকম টানাটানি গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে।
বাসটির ম্যানেজার মো. রানা বলেন, ২০ বছর ধরে পরিবহন সেক্টরে আছি। এমন ডাল বাজার আগে দেখিনি। চাঁদরাতেও যেখানে যাত্রীতে ঠাসা থাকত গাবতলী, সেখানে যাত্রী নাই বললেই চলে। বলতে পারেন যাত্রীর চেয়ে বাস আর শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।
শুধু এসডি পরিবহনই নয়, প্রত্যেকটি রুটের বাসের শ্রমিকদের মুখে হতাশার ছাপ। কেউ বলছেন, এবার ঈদে খরচা তোলাই কঠিন, লাভ তো দূরের কথা। দীর্ঘ ছুটি, পদ্মা সেতু আর যাত্রীরা নিজের মতো করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঢাকা ছাড়ায় আজ ডাল বাজার (মন্দাভাব) বাস সেক্টরে।
শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ৮টা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত টেকনিক্যাল রজব আলী মার্কেট ও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী ঠিকই আসছেন তবে কেউ আগাম কেনা টিকিট নিয়ে কাউন্টারে ঢুকছেন, কেউ এসে হাঁক-ডাকে সাড়া দিয়ে পছন্দমতো বাসে উঠছেন।
যাত্রী আসতেই কাউন্টারগুলোর স্টাফরা দৌড়াদৌড়ি, হাঁকডাক আর টানাটানি শুরু করেন। প্রশ্নের পর প্রশ্ন, কই যাইবেন ভাই?
ঢাকা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলীতে পদ্মা স্পেশাল কাউন্টারের স্টাফ তোফাজ্জল বলেন, যাত্রী নাই। যাত্রী আসে, টানাটানি করে যে যেমন বুঝিয়া নিতে পারে নিজ নিজ বাসে।
তিনি বলেন, যাত্রীরা এবার অনেক ছুটি পেয়েছে। অনেক যাত্রী আগেই চলে গেছে। এখন চাহিদার তুলনায় কম যাত্রী বলেই হাঁকডাকে যাত্রী নিতে হচ্ছে।
বাস টার্মিনালে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি সাজানো দূরপাল্লার বাস। কিন্তু যাত্রী যেন সোনার হরিণ। এক যাত্রী আসতেই ১০/২০টি পরিবহনের স্টাফের মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা।
রংপুর রুটের অপু পরিবহনের স্টাফ হারুন বলছেন, এবার ডাল বাজার ভাই। গাবতলী বাস টার্মিনালে তো গত ঈদেও যাত্রীর চাপে দাঁড়ানো যেত না। সেখানে এবার যাত্রী নেই বললেই চলে। দেখেন সবাই হাঁকডাক করছে। বলতে গেলে যাত্রীর চাইতে স্টাফদের সংখ্যাই বেশি বাস কাউন্টারগুলোতে।
রজবআলী মার্কেটের পাবনা এক্সপ্রেসের কাউন্টারের হিসাবরক্ষক শামসুল আলম বলেন, প্রত্যেক ট্রিপে লস। যা যাত্রী পাচ্ছি নিয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। ফিরতি পথে আরও লস, কারণ খালি আসছে। বুদ্ধি কইরা ২/৩ ট্রিপ মিলে, কখনো ট্রিপ না মেলায় অন্য বাসের যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে।
যশোর রুটের দ্যুতি পরিবহনের সামনে কথা হয় আব্দুল জলিল নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কারখানায় আজও কাজ ছিল। অফিস সেরা পরিবার নিয়ে আসছি কাউন্টারে। কোনো চাপ নাই। বাসে সিট পর্যাপ্ত, পছন্দ মতো বাসে উঠে চলে যাব বাড়ি।
ঢাকা-পাটুরিয়া ঘাট রুটের পদ্মা স্পেশাল বাসের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সময় তো ২৫০/৩০০ টাকা দিয়াও সিট পাইতাম না, আজ দেখি ডেকে উঠাচ্ছে। ভাড়াও কম ১৯০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনিক্যাল থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সব ইউটার্ন বন্ধ। ঘুরে আসতে হচ্ছে। মাজার রোড থেকে শুরু করে গাবতলী পর্বতা সিগন্যাল পর্যন্ত দুই লেন বানিয়ে একরকম পাহারা বসিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। কোনো বাসকে পথে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ট্রাফিক সদস্য হাবিব বলেন, এবার যা চাপ ছিল গতকাল (শুক্রবার) গেছে। আজ কোনো চাপ নেই, যাত্রী কমেছে। রাস্তাও ক্লিয়ার।-ঢাকা পোস্ট