এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল ডিজেল আসার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে চলতি মাসের শেষ দিকে। আগামী মে থেকেই চালু হবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন পাইপলাইনে তেল সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)।
পাইপলাইনে চট্টগ্রামএই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৩০ লাখ টন ডিজেল আসবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে। পাইপলাইনটির তেল সরবরাহের সক্ষমতা ৫০ লাখ টন। পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় ও তেল অপচয় ঠেকানোসহ বছরে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে বিপিসি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল আসে নদী ও সড়কপথে।
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝেমধ্যেই তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নদী ও সড়কপথে তেল পরিবহনের বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল সরবরাহ শুরু মে মাসেকারণে খরচ যেমন বেশি, তেমনি তেল চুরির অভিযোগও রয়েছে। একই সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্যতা কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এসব সংকট নিরসনেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিপিসির পদ্মা অয়েল কম্পানির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়। শুরুতে পাইপলাইন প্রকল্পটির ব্যয় দুই হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ধরা হয়। পরে সংশোধিত ব্যয় দাঁড়ায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটির কাজ আরো দুই বছর আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় দেরি হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনসহ সব ধরনের কাজ শেষ করে তেল সরবরাহের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় তেল আনা হবে। আগামী মে মাসেই বাণিজ্যিকভাবে তেল আনার কার্যক্রম শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই পাইপলাইনের মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে তেল সরবরাহ শুরু হলে বিপুল পরিমাণ পরিবহন ব্যয় ও অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয় উঠে আসবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশ পরিবাহিত হয় নৌপথে। তেল বিপণন কম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় ২০০টি অয়েল ট্যাংকার এসব জ্বালানি তেল পরিবহন করে। নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনে সিস্টেম লসের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে। তা ছাড়া, শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা কমে যাওয়ায় জ্বালানি তেল পরিবহনে সংকট তৈরি হয়। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের প্রায় ৩০ হাজার ট্যাংক লরির পাশাপাশি রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথেও জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। মোট চাহিদার প্রায় ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয় ঢাকা বিভাগে। চাহিদা পূরণে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তাখাল প্রধান ডিপো থেকে নৌপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুর ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে পরিবহন ও রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
বিপিসির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এটি চালু হলে জ্বালানি তেল সরবরাহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এর মাধ্যমে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে মজুদ সক্ষমতা বাড়বে। নৌপথের ওপর তেল পরিবহনের নির্ভরশীলতা ও পরিবহন ঝুঁকি এবং অপারেশনাল লসও কমে আসবে।
পাইপলাইন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত সাতটি স্টেশনসহ ২৪১.২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত দুটি স্টেশনসহ ৮.২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে অন্তত ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। প্রকল্পটির আওতায় কুমিল্লার বরুড়ায় নতুন একটি ডিপো স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে খুব সহজে কুমিল্লাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে।-কালের কণ্ঠ