রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৩৪:১৭

মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি যত বাড়লো পেঁয়াজের দাম

মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি যত বাড়লো পেঁয়াজের দাম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রতিদিনের বাজারে পেঁয়াজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রান্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় এই পণ্যটির দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—সকলেই প্রভাবিত হন। সম্প্রতি পেঁয়াজের দামে হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় যেখানে কৃষকের মুখে হাসি, সেখানে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে এক দুঃস্বপ্ন।

পেঁয়াজের দাম বর্তমানে বাজারে অন্যতম আলোচিত বিষয়। ভারতের আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে হঠাৎ করে দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রে কৃষকরা এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি করছেন, যা মাত্র তিন দিন আগেও ছিল ৪০-৪২ টাকা। এতে কৃষকরা যেমন খুশি, তেমনি ক্রেতারা অতিরিক্ত খরচের বোঝা টানছেন। রাজধানীর বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ফরিদপুরের কৃষক আবুল হোসেন ও সিরাজ মোল্লা জানান, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। আগে যেখানে উৎপাদন খরচ উঠানো কঠিন ছিল, এখন তাঁদের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি। তবে ভোক্তারা বলছেন, এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের দৈনন্দিন খরচে বড় চাপ ফেলছে।

বাজার অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাইকারি পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য ৩৪ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও, বাস্তবে কোথাও তা দেখা যায় না। এ অবস্থায় সরকারকে বাজারে মনিটরিং বাড়ানো এবং আমদানি নীতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পেঁয়াজ উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ ও খরচসাপেক্ষ প্রক্রিয়া। পাবনার সুজানগর উপজেলার কৃষি অফিসার জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৯২,৪০০ টাকা এবং প্রতি বিঘায় গড়ে ৫৫ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এতে করে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ টাকা।

বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ৫০ টাকার উপরে হওয়ায়, কৃষকরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। পাবনার জহির হোসেন জানান, গত বছরের দামে প্রভাবিত হয়ে তিনি এই বছর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন, যদিও শুরুতে দাম কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন।

যদিও এই মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের জন্য ভালো খবর, ভোক্তার জন্য এটি একধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। শহরের বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি আমদানি ব্যবস্থা দ্রুত চালু না হয় এবং সিন্ডিকেট কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে আগামী দিনে দাম আরও বাড়তে পারে।

পেঁয়াজ বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব ও আমদানি বন্ধের পরিণতি
সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এর ফলে দেশের বাজারে সরবরাহ কমে যায় এবং চাহিদা বাড়ায় দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি জানান, বৃহৎ মোকাম ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

গত বছর সরকার খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল, এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমে। তবে বর্তমানে ভারতের আমদানি বন্ধ থাকায় আবার দাম বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন বাজার—যেমন মোহাম্মদপুর, নিউ মার্কেট, হাতিরপুল—সবখানেই ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু এলাকায় এখনও ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে ভ্যানে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজে।

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে