সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:১২:৩৯

এই শহিদরা রক্ত না দিলে ড. ইউনূস আজ জেলে থাকতেন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এই শহিদরা রক্ত না দিলে ড. ইউনূস আজ জেলে থাকতেন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : এই শহিদরা রক্ত না দিলে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আজ জেলে থাকতেন বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। ড. ইউনূসকে হাসিনার নির্যাতনের কথা মনে রাখতে বলেছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ফুয়াদ বলেন, আমার শত্রু  কারা এবং আমার স্বার্থ কী? এর সাপেক্ষেই হচ্ছে আগামী দিনে বাংলাদেশে রাজনীতি তৈরি হতে হবে। সেই দায় ও দরদের রাজনীতিতে বাংলাদেশে দুই প্রশ্নে সবচেয়ে বড় ক্রিটিক্যাল ইস্যু হচ্ছে- আমরা কালেক্টিভলি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন যারা করেছি তারা আওয়ামী লীগ প্রশ্ন কিভাবে হ্যান্ডেল করছি বা ডিল করছি? কারণ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় ল্যাস্পেন্সারদের যে মাফিয়া কার্টেল ছিল তারা স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল না। 

যারা মনে করে থাকেন যে রাজনৈতিক দল আকারে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন মোতাবেক যে সিভিল পলিটিক্যাল রাইটস তারা প্রিভিলেজ আকারে পাওয়ার কথা ছিল তারা সেটা পাবেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারের রিপোর্টে যেটা বলা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল, তাদের নিষিদ্ধ করা যাবে না? তাদের কাছে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে কিনা, সেটা আগে আদালতে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক  বলেন, যদি জনতার আদালতে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ-২-এর আদালতে এবং বিচারিক আদালতে আওয়ামী লীগ যদি প্রমাণ করতে পারে তারা রাজনৈতিক দলের সব সংজ্ঞা পূরণ করতে পারবে, তবেই রাজনীতিতে থাকার দ্বিতীয় প্রশ্ন আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ১৪০০ শহিদের রক্ত দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে গেছে। ওই ভবিষ্যৎ কোনো কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়ে আবার নতুন করে লেখবার প্রয়োজন হবে না। তাই প্রশ্ন হচ্ছে- আওয়ামী লীগ প্রশ্ন আমরা কিভাবে ডিল করব? এটাই হচ্ছে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জায়গা এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা যখন দেখা করেছি বারবার বলেছি চারটা গণতদন্ত কমিশন গঠন করবার জন্য। তার ভেতরে আজকের ইনকিলাব মঞ্চ যাদের কথা বলছে; যাদের দাবি নিয়ে আজকে হাজির হয়েছে; তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে আমরা বলেছি- শাপলার গণহত্যার জন্য গণতদন্ত কমিশন করতে হবে; পিলখানার গণহত্যার জন্য গণতদন্ত কমিশন করতে হবে; কিন্তু আমরা দুঃখজনকভাবে দেখলাম পিলখানা থেকে দায়িত্ব এড়িয়ে একটা প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে কমিশন দেওয়া হয়েছে; তার ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে; সেই মামলার প্রশ্ন আলোচনা করতে পারবে না; কোনো ফাইল রিকল করতে পারবে না। সাক্ষীদের তদন্ত করতে পারবে না। ঠিক এভাবে একই চক্রান্ত করে একটা আইওয়াশের কমিশন দিয়ে বাংলাদেশে আবার নতুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা ২০০৯ সালে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের দুইটা ফোর্সকে একই সময়ে ধ্বংস করে দিয়েছে- তাদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কমিশনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে দেওয়ার নতুন ব্লু কলার ক্রাইমের শুরু হয়েছে। এই কমিশনকে দায়িত্ব খর্ব করে যেটা করা হয়েছে সেটাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং আমরা বলছি নতুন করে প্রজ্ঞাপন দিয়ে তার টার্মস অব রেফারেন্সকে রিভাইজ করতে হবে এবং গণতদন্ত কমিশনের ফর্মে নিয়ে আসতে হবে। আমরা বলেছিলাম বাংলাদেশে গুম, খুন ও আয়নাঘর থেকে শুরু করে গত ১৬ বছরে যে রাষ্ট্রীয় মদদে খুন-খারাবির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল- সেটার জন্য গণতদন্ত কমিশন করতে হবে।

ঠিক একইভাবে দেখলাম একটা গুম কমিশন করা হয়েছে যার ক্ষমতা নাই; যাকে অযোগ্য লোক দেওয়া হয়েছে; পাবলিকলি সাফিশিয়েন্টলি ম্যানপাওয়ার দেওয়া হয় নাই। গণতদন্তের যে ফর্মের কথা আমরা বলেছি; যে কাঠামো প্রস্তাব করেছিলাম সেই কাঠামো পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই। 

ঠিক একইভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছিলাম- জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে একটা গণতদন্ত কমিশন করেন এবং আমরা এটার ফরম্যাট পর্যন্ত একাধিক উপদেষ্টাকে দিয়েছি। আমেরিকার কংগ্রেশনাল হিয়ারিংয়ের মডেলে সিনেট হিয়ারিংয়ের মডেলে ব্রিটিশ এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টগুলোতে যেভাবে উন্মুক্ত শুনানি হয় সেই শুনানির মডেল অনুসারে সেখানে গণতদন্ত কমিশন হতে হবে।

ফুয়াদ বলেন, আজকের ইনকিলাব মঞ্চে এসে যেভাবে শহিদ পরিবার তাদের কথা বলেছে সেই উন্মুক্ত শুনানিতে যেটা পিটিভি লাইভ সম্প্রচার করবে- সেখানে শহিদ পরিবার এসে তার গল্পের কথা বলবে; তার কষ্টের কথা বলবে; তার আকাঙ্ক্ষার কথা বলবে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে কী থাকবে না সেই কথা ১৪০০ শহিদ পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে; কোনো সুশীল উপদেষ্টার কথায়, কোনো শাশুড়ির কথায়, দিল্লির কথায়- সেই সিদ্ধান্ত হবে না। 

আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিরা গণতদন্ত কমিশনে গিয়ে উন্মুক্ত শুনানিতে অংশ নিয়ে; বাংলাদেশের কোটি কোটি নাগরিক যেখানে নিবন্ধন করে তাদের মতামত দিতে পারবে- সেই এ মতামতের ওপরে ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ প্রশ্ন; গণহত্যার প্রশ্ন; জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় দিল্লির গোলামদের ভবিষ্যৎ কী হবে- সেইটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের ওপরে ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে- এ প্রস্তাব দেওয়ার সাত মাস আট মাস পেরিয়ে গেলে পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি জুলাই গণহত্যা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবার আয়োজন দেখতে পাচ্ছি না; জুলাইয়ের গণকবর যেটা আমরা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভিজিট করেছি সেখানে উপদেষ্টাদের যাবার কোনো সময় দেখতে পাচ্ছি না। 

অথচ এখানে অনেক উপদেষ্টা দেখেছি ৭১-এর চেতনা বিক্রি করতে করতে ১৪ ডিসেম্বরের শহিদদের কবর জিয়ারত করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন; কিন্তু রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে জুলাই ১১৪ শহিদের কবর জিয়ারত করার সময় তাদের নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে বলছি এই শহিদরা না থাকলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আপনি আজকে জেলে থাকতেন; লিফট ছাড়া বিদ্যুৎ ছাড়া বিল্ডিংয়ের ছয়তলায় হাসিনা আপনাকে ওঠবস করাইতো। সেই দিনের কথা ভুলে যায়েন না।

তিনি বলেন, আপনার মামলাগুলো আজকে আদালতের মধ্যেমে নাই করে দিয়েছেন। এই নাই করার রাজনীতি হইতো না। আপনার মামলা চলত। যাদের কারণে ও যাদের রক্তের কারণে আজকে আপনি বেকসুর খালাস; যাদের রক্তের কারণে আপনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন তাদের রক্তের বদলা যদি না নেন- আপনাকে আগামী দিনে মানুষ ক্ষমা করবে না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে