মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ০৬:১৩:১১

নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা, এজলাসে হাস্যরসে হাসলেন বিষণ্ণ মমতাজও!

নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা, এজলাসে হাস্যরসে হাসলেন বিষণ্ণ মমতাজও!

নাইমুর রহমান নাবিল : সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানি ঘিরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এ সঙ্গীতশিল্পীকে আদালতে হাজির করা হলে আইনজীবীদের হট্টগোল এবং যুক্তিতর্কের মধ্যে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তার বক্তব্যে মমতাজের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং বিতর্কিত মন্তব্যগুলো তুলে ধরেন, যা এজলাসে হাসির রোল তোলে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীকে খুঁজতে বেগ পাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে রিমান্ডের মেয়াদ নিয়ে আইনজীবীদের অসন্তোষ আদালত প্রাঙ্গণকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়ার আদালতে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এদিন দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে মমতাজকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। পরে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। শুনানিকালে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এজলাসে অনেক আইনজীবী উপস্থিত হলে আদালতে হট্টগোল তৈরি হয়। এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

হত্যা মামলায় মমতাজ ৪ দিনের রিমান্ডে
আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুনানির সময় কেউ পাশ থেকে কথা বলবেন না। এজলাসের ভেতরে কেউ ছবি তুলবেন না।’ আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু বলবেন না যেন অডিয়েন্সে (উপস্থিত শ্রোতা) বিশৃঙ্খলা হয়।’

বেলা ৩টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হলে মমতাজের হেলমেট ও মুখে পরিহিত কালো মাস্ক খোলা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’

ঢাকার আদালতে মমতাজ : ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন
এরপর মহানগর প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি।’

‘তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি; গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হয়, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষের ভোট হরণ করল। সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি টাকা খরচ হয় সেখানে সে গান গাইল— আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ অন্য সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটু কথা বলেনি, সেখানে সে বক্তব্য রাখল খালেদার বাপের নাম কি?’

এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম-শেইম’ বলে স্লোগান দেন। শুনানির সময় জনাকীর্ণ এজলাসের কাঠগড়ায় পুরো সময় গালে হাত দিয়ে বিষণ্নচিত্তে পিপির বক্তব্য শুনতে দেখা যায় মমতাজকে। একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকতো তখন সে হাসিনাকে গান শুনাতো।’ এ সময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়। পিপির বক্তব্য শুনে বিষণ্ণ মমতাজ নিজেও হাসেন।

পরবর্তী সময়ে আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। সেখানেও আইনজীবীকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় আদালতের। আসামিপক্ষের দাখিল করা নথি দেখে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। এরপর মমতাজকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন— ‘আপনি কি ওনাকে চেনেন? আপনার আইনজীবী হিসেবে তাকে নিয়োগ করতে চাইলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন।’

কিছুটা সময় নিয়ে মমতাজ তার আইনজীবীকে শনাক্ত করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজকে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ এরপর আদালত বেলা ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। রিমান্ডের আদেশ শুনে আইনজীবীরা বলে ওঠেন, ‘চার দিন না, সাত দিনেরই রিমান্ড দিতে হবে।’

এরপর মমতাজকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘তাকে লিফটে নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে হবে। বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে-হেঁটে তোলা হয়েছে। তাকে সাত তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে।’ পরে এজলাসের গেটের সামনে অবস্থান নেন আইনজীবী। তারা এ সময় বেশ উচ্চবাচ্য করেন। তখনো আদালতে বিচারকাজ চলছিল।

পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার ইন্সপেক্টর মো. জাহিদুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘যে অবস্থা আসামিকে কিছুক্ষণ কাঠগড়ায় রাখা হোক।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি পারলে লিফটে নামিয়ে নিয়ে যান।’

জবাবে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এখন এখানে নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে তাকে কিছুক্ষণ রাখতে হবে।’

তখনও এজলাসে কয়েকজন আইনজীবী অবস্থান করে চিল্লাপাল্লা করছিলেন। পরে আদালত আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীও আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করতে বলেন। তখন আইনজীবীরা গেটের সামনে অবস্থান নেন। প্রায় ২১ মিনিট এজলাসে রাখা হয় মমতাজকে। পরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে তাকে লিফটে তুলে নিচে নামানো হয়। কিন্তু নিচে গিয়েও অবস্থান নেন আইনজীবীরা। পরে নিচ থেকে অতি দ্রুত মমতাজকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় আইনজীবীরা মমতাজকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ভাষায় কটূক্তি করেন।-ঢাকা পোস্ট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে