এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি।
ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটসহ আওয়ামী লীগের সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটি শুধু মাঠে নয়, অনলাইনেও কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ফেসবুকসহ অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি সরিয়ে ফেলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্র জারির পর বিটিআরসির মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব, মেটাসহ সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হবে।
এদিকে, গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে একটি প্রতিবাদ পোস্ট দেওয়া হয়। পরে সেখানে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও প্রকাশ করে দলটি।
এই অবস্থার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন স্থগিত করেছে।
গত সোমবার রাতে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সবধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা, সেমিনার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
নির্বাচন কমিশন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেটের কপি পাওয়া যাবে সরকারি মুদ্রণালয় থেকে।
১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। নিবন্ধন না থাকলে কোনো দল এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছিল। এবার সেই আইনের আওতায় নিজেরাই নিষিদ্ধ হলো।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা সংশোধন এনে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করেছে। ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সহিংসতা চালানো হয়। এতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই আন্দোলনের জেরে ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারায় আওয়ামী লীগ। দলটির অনেক নেতা গ্রেফতার হন, কেউ কেউ দেশ ছাড়েন। কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকেই দলটি নিষিদ্ধের দাবি উঠতে থাকে। বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন স্থগিতের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত আরও একধাপ এগোল। এর ফলে দলটি এখন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।