বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ১১:৫২:০২

আদালতের এমন আদেশে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, ছেলেকে সোনা, সোনা ডাকতে থাকেন

আদালতের  এমন আদেশে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, ছেলেকে সোনা, সোনা ডাকতে থাকেন

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পারিবারিক কলহে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া এক দম্পতির ছেলে সন্তান কার কাছে থাকবে তা নিয়ে আজ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় আদালতে। মায়ের কাছে থাকার পক্ষে আদালত রায় দিলেও বাচ্চাটি বাবার কাছেই থাকতে চায় বলে জানায়। পরে মায়ের কান্নাকাটি আর টানাহেঁচড়ায় আদালতের বারান্দায় এক বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করে বাচ্চাটিকে আপাতত বাবার কাছে রাখার আদেশ দেন।

বুধবার (১৪ মে) ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক নুসরাত জাহান খান রাইয়ান নামে ওই বাচ্চাকে বাবার জিম্মায় থাকার আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজিব মাহমুদ আলম জানান, ‘এটি একটি চাইল্ড কাস্টডি মামলা। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হওয়ার পর থেকে বাচ্চা মায়ের কাছেই ছিল, গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। এর মধ্যে ২৫ দিন আগে বাচ্চার মা বাচ্চাকে ৬০ টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। চিরকুটে বাবার নম্বর লিখে দিয়ে বলে চলে যা। পটুয়াখালী শহরে গিয়ে বাচ্চা তার বাবাকে ফোন করে। পরে বাবা তার বোনকে সেখানে পাঠিয়ে বাচ্চাটাকে নেন। বাবা পটুয়াখালীতে যান। এরপর থেকে বাচ্চাটা বাবার কাছে ছিল। এর মধ্যে মা কোর্টে একটি পিটিশন দেয় বাচ্চাকে ফেরত নিতে। গত ১২ তারিখে আদালত আদেশ দেন, বাচ্চাকে মায়ের জিম্মায় ফেরত দিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালত যেহেতু আদেশ দিয়েছেন বাচ্চাকে মায়ের জিম্মায় ফেরত দিতে, আদালতের নির্দেশে বাচ্চার বাবা তাকে আদালতে নিয়ে আসে। বাচ্চার মা-ও আসে তাকে জিম্মায় নিতে। কিন্তু বাচ্চাটা মায়ের কাছে যেতে চায় না। কোনোভাবেই সে মায়ের কাছে যাবে না। আমরা বিপাকে পড়ে গেলাম। তখন আমরা আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করি। আদালত ক্যামেরা ট্রায়ালে বসে শুধু বাচ্চাকে নিয়ে। তার সঙ্গে একা কথা বলে। বাচ্চাটা জানায়, সে বাবার সঙ্গে থাকতে চায়। তখন আদালত আগের আদেশ পুনর্বিবেচনা করে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত তাকে বাবার জিম্মায় থাকার আদেশ দেন।’

এদিকে এমন আদেশ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা শারমিন রিমা। ছেলেকে সোনা, সোনা বলে ডাকতে থাকেন তিনি।

এ সময় ছেলেকে কাছে নিতে চান শারমিন রিমা। তবে রাইয়ান মায়ের কাছে যেতে চায়নি। কেন যেতে চাও না— জানতে চাইলে সে বলে, ‘মা আমাকে মারে। মা নিজেই আমারে বের করে দিয়েছে।’

তখন শারমিন বলেন, ‘২৫ দিনে আমার ছেলেটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। ও ওর বাবার শেখানো কথা বলছে।’ তখন রাইয়ান বলে, ‘তুমিই তো আমাকে দিয়ে দিছো। বাবা কিছু শিখিয়ে দেয়নি।’

পরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শারমিন বলেন, ‘তোরে ছাড়া আমি ঘুমোতে পারি না। তুই আমার শরীরে পা না দিলে, জড়ায়ে না ধরলে ঘুমোতে পারি না। তুই মা আর এই জীবনে দেখবি না। আমি ওকে ছাড়া পটুয়াখালী যাব না। যাওয়ার সময় গাড়ির নিচে লাফ দেব।’

এসব কথা শুনে রাইয়ান ভয়ে মায়ের কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে যায়।

বাবা কামাল আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় আসার পর থেকে ও আমাকে বলছে, বাবা তুমি আমাকে মায়ের কাছে পাঠাবে না তো? আমাকে ফেলে দিও না। মা আমাকে ফেলে দিয়েছে, মারছে। দেখেন ওরে কেমনে মারছে। মাইরে পাঠায় দিয়েছে। পরে তিনি ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে যান।’

২০২৩ সালের ২০ আগস্ট কামাল আহমেদের আদালতে করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৫ জুন তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কাপড় ব্যবসায়ী কামাল শারমিনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় থাকাকালে শারমিন রান্না-বান্না করতেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতো। ২০১৭ সালে রাইয়ানের জন্ম হয়। দাম্পত্য কলহে একসময় শারমিন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী চলে যান। সালিশ করে শারমিনকে আবার ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কিছুদিন ঢাকায় থেকে তিনি আবার পটুয়াখালী চলে যান।

‘যদিও কামালের অভিযোগ, শারমিন অন্য একটি ছেলের সঙ্গে চলে যান। ফিরে এসে কামালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার তদন্তভার উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেন। পরে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তারা আবার ঢাকায় চলে আসেন। আবার কিছুদিন পর শারমিন গ্রামে গিয়ে কামালকে ডিভোর্স দেন। ছেলের ভরণপোষণ বাবদ প্রতিমাসে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে বলা হয়। তবে শারমিন ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেননি, ঠিকমতো খাবারও দিতেন না।’

‘২০২২ সালের ২০ অক্টোবর কামাল ছেলেকে আনতে গ্রামের বাড়িতে যান। তবে শারমিন ছেলেকে দেননি। এরপর ছেলেকে দেখতে গেলে তারা ছেলেধরা বলে মারবে মর্মে হুমকি দেন। এর মধ্যে ব্যবসায় মন্দার কারণে কামাল ভরণপোষণের টাকা দিতে পারেননি। শারমিন লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দেন। পরে আদালত ছেলের ভরণপোষণ বাবদ চার হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন। কামালকে ছেলেকে মাসে ৩ থেকে ৪ বার দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু শারমিন কামালকে রাইয়ানকে দেখতে বা ফোনে কথা বলতে দিতেন না। পরে রাইয়ানকে তার মা গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সে গ্রামে তেমন লেখাপড়া করত না, দুষ্টুমি করত। শারমিন রাইয়ানকে দেখভাল না করে নির্যাতন করেন অভিযোগ তুলে ছেলেকে নিজের কাছে চেয়ে মামলা দায়ের করেন।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে