মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ১১:২৫:০০

তিন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা, পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপরে!

 তিন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা, পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপরে!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কয়েক দিনে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয়-আসামে ভারি বর্ষণের ফলে সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালি নদীর পানি বাতকুচি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর পয়েন্টে ৬৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ১২৫ মিলিমিটার ও নাকুগাঁও পয়েন্টে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালি নদীর পানি বাতকুচি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভোগাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার এবং নাকুগাঁও পয়েন্টে ১৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৬৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নদীর পানি বাড়লেও কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আগামী দুই দিন আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে আগামী ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানি নেমে যাবে।

ঝিনাইগাতীর মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীতে মিটার গেজ না থাকায় ওই দুই নদীর পানি পরিমাপ জানা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্র মতে, ওই দুই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা সম্ভাবনায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আকস্মিক বন্যার শঙ্কায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মানুষ। এদিকে চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং অন্য পাহাড়ি নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের বন্যার সতর্ক বার্তার কারণে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অধিকাংশ জমির বোরো ধান কাটা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলার ৯৪ ভাগ জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, গত বছর অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসল, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এবারো বন্যার আশঙ্কায় স্থানীয়রা বেশ উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

মঙ্গলবার থেমে থেমে ভারি বৃষ্টির পানিতে ও নেমে আসা ঢলের পানির কারণে ঝিনাইগাতী-ভায়াডাঙ্গা সড়কের করারগাঁও বটতলা বাজারের রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইগাতীতে নির্মাণাধীন চাপাতলী সেতুর উভয় পাশের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বাগেরভিটা এলাকায় কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝিনাইগাতী নয়াগাঁও মাজারসংলগ্ন কবরস্থান এলাকায় পাগলা নদীর পানিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাঁকাকুড়া ও ফুলহারির মধ্যবর্তী এলাকায় পাহাড়ি ঝোড়ার পানি পাড়ের পুরোনো ভাঙা অংশ দিয়ে পাশের জমিতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, সোমবার পর্যন্ত সর্বশেষ জেলার ৯৪ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ধান কাটা সম্ভব না হওয়ায় ঝিনাইগাতীর আড়াই হেক্টর এবং শ্রীবরদী উপজেলায় সাড়ে ৯ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে এখনও বন্যা বলা যাবে না। কয়েক ঘণ্টার মধ্য পানি নেমে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা প্রতিটি উপজেলায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করছি। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও বন্যা মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

 

 

 

 

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে