বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪৬:৪৪

টিকিট পায় না মানুষ, ট্রেনের বগি যায় ফাঁকা

টিকিট পায় না মানুষ, ট্রেনের বগি যায় ফাঁকা

নিউজ ডেস্ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনে হাজির হয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ট্রেনটি স্টেশন ছাড়ে সময়মতো। কিন্তু একটি বগি (এক্স-৩) পুরো ফাঁকা দেখে যাত্রী ও প্ল্যাটফর্মে থাকা মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।

কারণ ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিটের জন্য অনেকটা হাহাকার চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে টিকিট পাননি। সে অবস্থায় কীভাবে পুরো একটা বগির ৬০টি আসন ফাঁকা যায়, এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। এর পাশের বগির যাত্রী আবদুল কাদের। তিনি চলন্ত ট্রেন থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন, হয়তো পরবর্তী যাত্রাবিরতির স্থান ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে এই বগির যাত্রীরা উঠবে। কিন্তু বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ার পরও বগিটি ফাঁকাই থেকে যায়। অবশ্য সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিমানবন্দরের পর চট্টগ্রামের আগে আর কোথাও থামে না। আর এই ট্রেনে আসনবিহীন টিকিটও বিক্রি হয় না।

রেলওয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ‘এক্স-৩’ বগিটি ১৬ সেপ্টেম্বর থেকেই সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীলদের গাফিলতির কারণে ওই বগির কোনো টিকিটই বিক্রি হয়নি। ফলে গত ছয় দিন ধরে (১৮ সেপ্টেম্বর ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল) বগিটি ফাঁকা গেছে। কিন্তু তা রেলের কর্মকর্তাদের নজরে পড়েনি।

এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ গতকাল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বলে গতরাতে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মকবুল আহমেদ। তিনি দাবি করেন, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নয়, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘এক্স-৩’ বগিটি যুক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী ভরে এসেছিল, ঢাকা থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

এবারের ঈদে ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বরের ট্রেনের টিকিটের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকিট অনেকটা সোনার হরিণের মতো। ২২ সেপ্টেম্বরের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর।

রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন বগি সংযোজন করার পর সেটির টিকিট বিক্রির জন্য কম্পিউটারে তথ্য দিতে হয়। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের এক্স-৩ বগির টিকিট কম্পিউটারেই দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক খানও ওই ট্রেনের অন্য একটি বগির যাত্রী ছিলেন। তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম পর্যন্ত সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ‘এক্স-৩’ বগিটি ফাঁকাই ছিল। তিনি বলেন, এই ট্রেনের চারটি টিকিট কাটতে গিয়ে তিনি দুটি টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু পুরো একটি বগি ফাঁকা যাওয়া দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুব পীড়াদায়ক। রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যাত্রীরা টিকিট থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারও রাজস্ব হারিয়েছে।

ঈদে আগাম টিকিট বিক্রির লক্ষ্যে এক মাস আগে থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। রেলমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিন-তারিখ ঘোষণা করেন। ঈদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অগ্রিম টিকিট পেতে মানুষকে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

বগি খালি যাওয়ার বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুজিবুল হক প্রতিবেদককে বলেন, খালি যাওয়ার অভিযোগ আমিও পেয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে বিমানবন্দর থেকে যাত্রী উঠেছে। তবে এই ক্রাইসিসের সময় কেউ অবহেলা করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর মহানগর প্রভাতী (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ট্রেনে বগি যুক্ত না করেই টিকিট বিক্রি করে রেল কর্তৃপক্ষ। ওই ট্রেনের একাধিক যাত্রী জানান, ‘ত’ বগির টিকিট ক্রয় করে স্টেশনে গিয়ে দেখেন ওই বগিটিই নেই। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে ট্রেন ছেড়ে দেয়। কিছু যাত্রী অন্য বগিতে উঠতে পারলেও অন্যরা যেতে পারেনি।-প্রথমআলো
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে