এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে দেশ গড়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে জনগণ বিএনপিকে সমর্থন জানালে নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সবার জন্য কর্মবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যুব দিবসের আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে ‘যুব সমাজের প্রত্যাশা ও বিএনপির পরিকল্পনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, স্লোগাননির্ভর রাজনীতির দিন ফুরিয়ে এসেছে।
বিএনপি শুধু প্রতিশ্রুতি দেয় না, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্বাস করে। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সব পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইলে বিএনপির প্রতি জনগণের স্বতঃসাফূর্ত সমর্থন প্রয়োজন। জনগণের শক্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে-ফ্যাসিবাদের দেড় দশক পর ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব নারী-পুরুষ, ছাত্র-তরুণ, যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের কাছে আমার আহ্বান-আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিন। দেশ গড়ার সুযোগ দিন।
সবার সহযোগিতা চেয়ে এতটুকু বলতে চাই- ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গড়ব মিলেমিশে। তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করাই হচ্ছে আগামী দিনের বিএনপির মূল রাজনীতি। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি তখনই সম্ভব যখন কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা যায়। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে এসে আমরা যদি সহনশীল ও সমঝোতার রাজনীতি চর্চা করি তাহলে দেশের সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
বক্তব্যের শুরুতে প্রযুক্তিনির্ভর যুবসমাজ গড়ে তোলার বিষয়ে তারেক রহমান দলের কর্মপরিকল্পনা বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই তরুণ যুবসমাজকে প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তরুণ-যুবসমাজকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন ও দক্ষ যুবশক্তি হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপির নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবসম্মত এবং সময় উপযোগী।
তরুণ-যুবসমাজের সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী শক্তি এবং কর্মস্পৃহা দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেবে। অপরদিকে যুবসমাজ বিপদগামী হলে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে পড়লে যুবসমাজের পক্ষে রাষ্ট্র ও সমাজে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনধারাকে বদলে দিচ্ছে।
প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। এসব নিত্যনতুন প্রযুক্তির কারণে অনেক ট্রেডিশনাল কাজ বিলুপ্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের বাজার বড় হচ্ছে। সুতরাং প্রযুক্তির নতুন বাজারে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। এজন্য অবশ্যই প্রয়োজন দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন। তরুণ ও যুবসমাজের জন্য এ মুহূর্তে দক্ষতা, যোগ্যতা অর্জনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে প্রযুক্তিনির্ভর তারুণ্য এবং যুবশক্তি গড়তে হলে যুবশক্তির প্রযুক্তিগত কর্মদক্ষতা অবশ্যই বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। স্কুল পর্যায় থেকে শিক্ষা কারিকুলাম প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হিসাবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আমাদের টিমগুলো কাজ করছে। প্রয়োজনীয় প্ল্যানিং তারা তৈরি করছে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা হতে পারে আমাদের একমাত্র সাফল্য ও সমৃদ্ধির নিয়ামক। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন শ্রমশক্তি থাকে, সেটি হলো ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের বিবেচনায় দেশের বর্তমান জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়মক হয়ে উঠতে পারে। কারণ বয়সের হিসাবে আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ কর্মক্ষম। এ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। একই সঙ্গে তরুণ-যুবকদের আগ্রহী একটি অংশকে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন প্রয়োজন। এজন্য এ খেলাকে পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রীড়া শিক্ষাকেও আমরা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।
এদিকে, বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি আগামী দিনে সরকার গঠন করতে পারে-তাই আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
যে কোনো অপকর্মের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে। বিএনপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে বড় দল হিসবে কাজ করবে। যাতে আওয়ামী লীগের মতো কারচুপির নির্বাচনের অভিযোগ তুলে কেউ বিএনপির দিকে আঙুল তুলতে না পারে। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের নেতা (তারেক রহমান) তার নিজস্ব সংগ্রাম দিয়ে নির্বাচনকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়ে এসেছেন। আমাদের দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন আয়োজনের। আমরা যাতে এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারি।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যৌথভাবে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। এতে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম খান ও মুক্তাদির রশীদ রুমি, নাট্য নির্মাতা মাসরুর রশীদ বান্নাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাফসির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।