রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ০২:৪৮:৫৬

একাত্তর ইস্যুতে এবার যা জানালেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার

একাত্তর ইস্যুতে এবার যা জানালেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার দাবি করেছেন, একাত্তরের গণহত্যা ও সংশ্লিষ্ট অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি ইতোমধ্যেই দুই দফায় হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রথমবার এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হয় ১৯৭৪ সালে, দ্বিতীয়বার হয় ২০০০ সালের শুরুর দিকে, যখন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশ সফরে এসে বিষয়টির সমাধান করেছেন।

রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন ইসহাক দার। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তিটি দুই দেশের জন্য ঐতিহাসিক ছিল। এরপর পারভেজ মোশাররফ যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন তিনি প্রকাশ্যে ও আন্তরিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই একাত্তরের ইস্যুতে দুইবার সমাধান হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের অবস্থান এর বিপরীত। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়নি। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বৈদেশিক সহায়তার অর্থের হিস্যা, অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের অংশীদারিত্বসহ একাধিক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত বিষয়।

সূত্র মতে, রোববারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সামনে তোলা হয়। বাংলাদেশ দৃশ্যত চায়, অতীতের দায়িত্ব পাকিস্তান স্পষ্টভাবে স্বীকার করুক এবং যৌক্তিক ভিত্তিতে বিষয়গুলোর সমাধানে এগিয়ে আসুক।

দুই দিনের সরকারি সফরে শনিবার ঢাকায় পৌঁছান পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। রোববার সকালে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, যেখানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইসহাক দার।

এই সফরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সমঝোতা, সংবাদ সংস্থাগুলোর সহযোগিতা, মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে চুক্তি এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে যৌথ কর্মপরিকল্পনাও আলোচনায় উঠে আসে।

বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং সার্ক জোটকে পুনরায় সক্রিয় করা নিয়েও আলোচনা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এই সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো এবং আন্তঃসংযোগ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সফরের অংশ হিসেবে ইসহাক দার বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হন। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক ছিল উল্লেখযোগ্য। বৈঠকের পর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার।

এছাড়া তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গেও দেখা করেন। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কিছু শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাদা আলোচনা করেন তিনি। রোববার রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে ইসহাক দারের।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে