সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:২৮:১২

নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের দরজা-জানালা ভাঙচুর আ.লীগের, তদন্তে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা

নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের দরজা-জানালা ভাঙচুর আ.লীগের, তদন্তে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা

মনোয়ারুল ইসলাম, নিউইয়র্ক থেকে : নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইবাদুর রহমান চৌধুরীসহ প্রায় ৫০ নেতাকর্মী।

রোববার বিকালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কনস্যুলেটে প্রবেশ করার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে ডিমও ছোড়েন। এরপরই কনস্যুলেটের দরজা-জানালা ভাঙচুর শুরু হয়।

প্রবাসী বাংলাদেশি ও মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে তথ্য উপদেষ্টার মতবিনিময়ের আয়োজন করেছিল কনসাল জেনারেল অফিস। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তুজাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীরা রোববার বিকাল ৫টা থেকেই কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়াস্থ কনসাল জেনারেল অফিসের সামনে অবস্থান নেন। তারা বাংলাদেশ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের উশৃঙ্খল কিছু নেতাকর্মী মিছিল করতে করতে কনস্যুলেটের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। সিকিউরিটি গার্ড ও অফিস স্টাফদের বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে দরজা-জানালায় লাথি মারে। কনস্যুলেটের প্রধান ফটকের কাচের দরজা ভেঙে যায়।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ২ জনকে আটক করে। পরে অবশ্য পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিস নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা করছে। কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঘটনার সময় স্বয়ং সরকারের উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটির বিষয়টিও জড়িত। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কনস্যুলেট যোগাযোগ রাখছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি মেয়র এরিক অ্যাডামসকেও অবহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যেই তদন্তে নেমেছে, সংগ্রহ করছে ভিডিও ফুটেজ।

কনস্যুলেটের বাইরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ চলে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এ সময় কনস্যুলেটের ভেতর প্রবাসী বাংলাদেশি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তুজা। সভাপতিত্ব করছিলেন কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। রাতে তথ্য উপদেষ্টা পুলিশ প্রহরায় কনস্যুলেট অফিস ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রীয় সফরে মাহফুজ আলম আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন।

মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, আগামী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থেকে জুলাই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সংস্কার, বিচার আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। জুলাই ঘোষণার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গৃহীত হওয়ার পর এখন জুলাই সনদ নিয়ে কাজ চলছে।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অনুষ্ঠানে আসা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তুজা বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, একটা দেশে রাজতন্ত্র চলছিল, সে দেশের রাজা ছিলেন, রাজার বোন ছিলেন, রাজার ছেলে-মেয়েরা রাজপুত্র ছিলেন। পুরো দেশটা তাদের ছিল। আপনারা ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে সেই রাজার পতন ঘটালেন, দেশ থেকে বিতাড়িত করলেন। এখন একটা ডিম নিক্ষেপ করবে, কটূক্তি করবে, মাহফুজ আলমের পতন চাইবে—এটাই তো স্বাভাবিক।- সূত্র: যুগান্তর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে