সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:২৫:৫০

মমতাজের পর এবার আদালতে একই ঘটনার শিকার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি!

মমতাজের পর এবার আদালতে একই ঘটনার শিকার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জুলাই আন্দোলনে হত্যায় উৎসাহসহ অর্থদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের পর এবার আদালতে এসে প্রচণ্ড ভিড়ে জুতা খোয়ালেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। এরপর খালি পায়ে আদালত ছাড়েন তিনি।

সোমবার (২৫ আগস্ট) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তাকে যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় ৫ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন বেলা ২টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এসময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

পরে শুনানিকালে বেলা ৩টা ২৬ মিনিটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় এজলাসে তোলা তাকে। এসময় হাজতখানা থেকে বের হওয়ার সময় তাকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে হাতকড়া পরানো হয়। তবে হাজতখানার বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যম, ইউটিউবার, আইনজীবীসহ উৎসুক জনতা আসামিকে দেখতে ভিড় করেন। হাজতখানার বাইরে বের করার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।

এসময় পুলিশ সদস্যরা ঢাল দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও হিমশিম খায়। শুনানির জন্য তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতের সপ্তম তলায় সিঁড়ি বেয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়। দুই-তিন তালা তোলার পর থেকেই প্রচণ্ড ভিড়ে নাজেহাল হয়ে যান আফ্রিদি। এরপর পুলিশ সদস্যরা তার মাথার হেলমেট, বুকের জ্যাকেট ও হাতের হাতকড়া খুলে ফেলেন। এসময় তাকে পানিও খাওয়ানো হয়। পরে ভিড় ঠেলে এগোতে থাকেন তৌহিদ আফ্রিদি। তবে হাঁটতে কষ্ট হওয়ায় খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাকে। সিঁড়িতে বারবার পড়ে যেতে থাকেন তিনি। পরে পুলিশ সদস্যদের কাঁধে হাত রেখে এজলাসে ওঠেন।

এজলাসে ওঠার পরও পুরো কক্ষ আইনজীবীতে ভরে যায়। এজলাসেও হট্টগোল শুরু হয়। জনাকীর্ণ এজলাসে হট্টগোলের মধ্যেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ৭ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।

আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তিনি আদালতকে জানান, মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাদীর অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিকটিম নিহত হন। এখানে আসামির কোনো ভূমিকা নেই। গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী এভিডেভিড দিয়ে বলছে তথ্যগত ভুলের কারণে তার নাম যোগ হয়েছে। তাকে এ মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোনো বাধা নেই। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।

শুনানিতে এই আইনজীবী আরও জানান, আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, তার চিকিৎসা চলমান। অতিরিক্ত হাঁটাচলায় তার প্রস্রাবে ব্লাড আসে। এ ছাড়া তার ওয়াইফ (স্ত্রী) প্রেগনেন্ট। মানবিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।

বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন, ঢাকা বারের সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান মুকুল রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, এই আসামি মামলায় এজাহারভুক্ত। তাকে মিডিয়া সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড করতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে, কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কার কী নির্দেশনা ছিল। কারা অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা। এই আসামি ডিবির হারুনের সঙ্গে একাধিক লাইভ করেছেন।

এসময় তারা আফ্রিদির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। কাঠগড়ার লোহার রেলিংয়ে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনানি শুনেন আফ্রিদি।

পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন আফ্রিদি। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে তার একাধিক পোস্ট আছে। এসময় এজলাসে ফের হট্টগোল শুরু হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘আসামির আলাদা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি নেই। আফ্রিদির কিডনিতে জটিলতা আছে জানিয়ে তাকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের কাছে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা চাওয়া হয়। এরপর আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

শুনানি শেষে এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে আফ্রিদিকে পেটে হাত দিয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। হাজতখানার সামনে দেখা যায় তার পা খালি। ভিড়ে জুতা খুইয়েছেন তিনি।

এর আগে গত ১৩ মে গ্রেপ্তারের পর হত্যা মামলার শুনানির জন্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম তীব্র ধাক্কাধাক্কি ও হুড়োহুড়ির মধ্যে নিজের জুতা হারান। পরে সে জুতা আদালত পাড়ার এক পাগলির পায়ে দেখা যায়।

এর আগে বেসরকারি টেলিভিশন মাই টিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে সিআাইডির একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে।

গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে আফ্রিদির বাবা নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন এ মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিদের ছোঁড়া গুলি আসাদুলের বুকে ও ডান পাশে লাগে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে