সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৪:১৭

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে আলুর দাম কমতে কমতে কত হয়েছে জানেন?

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে আলুর দাম কমতে কমতে কত হয়েছে জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আলু চাষিদের বিপুল লোকসান ঠেকাতে সরকার আলুর সর্বনিম্ন দাম ২২ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিলেও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের কোনো হিমাগারে বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু। শনিবার পর্যন্ত হিমাগার ফটকে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সর্বশেষ ২৯ আগস্ট রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের হিমাগারগুলোতে ১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। শনিবার বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা কেজি দরে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। চাষিরা আরও বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের কোনো প্রভাব নেই উত্তরাঞ্চলের আলু বাজারে। আলু এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে এখনো ৭০ ভাগ সংরক্ষিত আলুর মজুত রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট সরকার দেশের সর্বত্রই হিমাগার ফটকে প্রতি কেজি আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দেন। এই দামের কমে আলু বিক্রি না করতে হিমাগার মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনায় আরও বলা হয়, সরকার চাষিদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন আলু কিনবে। এই আলু অক্টোবর-নভেম্বরে বাজারে বিক্রি করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিদের প্রণোদনা প্রদান করা হবে।

এর আগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী হিমাগার পর্যায়ে আলু ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে আলুর মূল্য পর্যালোচনায় উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশক্রমে গত ২৭ আগস্ট হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর সর্বনিম্ন দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। হিমাগার সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্য কোথাও কার্যকর হয়নি।

এদিকে, ২৯ আগস্ট রাজশাহীর তানোরের রহমান কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার তাদের কোল্ড স্টোরেজে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে। ন্যূনতম ২২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রিসংক্রান্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা এখনো তারা পাননি। সরকারি নির্দেশনা এলে তারা ২২ টাকা কেজির কম দরে হিমাগার থেকে আলু ছাড় করবেন না।

রাজশাহীর মোহনপুরের দেশ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আকবর আলী জানান, গত সপ্তাহে হিমাগার গেটে ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি করে আলু বিক্রি হয়েছে। তবে সরকারি মূল্য ঘোষণার পর শুক্রবার কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা করে বেড়েছে। সামনে হয়তো দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ম্যানেজার আকবর আলীও জানিয়েছেন সরকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা শনিবার পর্যন্ত পাননি। সরকারি মূল্য কীভাবে কার্যকর হবে অথবা কে করবে সেটাও তাদের ধারণা নেই। চাষি ও ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

অন্যদিকে, রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। রাজশাহীর সবজির বড় মোকাম খড়খড়ির পাইকারি ব্যবসায়ী সাজিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এখনো বিপুল পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও এর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় চাহিদা ও জোগানের ওপর। মোকামে আলুর আমদানি বেশি। ক্রেতার সংখ্যা কম। আবার অন্য বছরের মতো বাইরের জেলাগুলোতে আলুর চালানও কম হচ্ছে।

রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁও এলাকার আলুচাষি সাঈদ হোসেন বলেন, গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলু চাষে খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা। এর সঙ্গে প্রতি কেজি হিমাগার ভাড়া সাড়ে ৫ টাকা। জমি থেকে আলু তুলে হিমাগারে পৌঁছাতে খরচ হয়েছে ২ টাকা। সবমিলিয়ে গড়ে প্রতি কেজি আলু ফলাতে খরচ হয়েছে ২৫ টাকার কিছু বেশি। বর্তমানে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। সাঈদ হোসেন আরও বলেন, প্রতি কেজি আলুতে চাষি ও ব্যবসায়ীর লোকসান হচ্ছে ১০ টাকা। সরকার ২২ টাকা কেজি দাম বেঁধে দিলেও তা শনিবার পর্যন্ত কোথাও কার্যকর হয়নি।

নওগাঁর মান্দার কালিকাপুরের আলু ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলী বলেন, গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি আলু খুচরায় বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। হিমাগার গেটে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। এবার খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৫ টাকায়। কিন্তু চাষি ও ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন মাত্র ১৫ টাকা। এই বিপুল লোকসানে চাষিরা আগামি মওসুমে আর আলু চাষ করতে পারবে না। এত বিপুল লোকসানের ভার চাষি ও ব্যবসায়ীরা কীভাবে সামাল দিবেন সেই সমাধান কারও কাছে নেই।

রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, এখনো রাজশাহীর ৩৬টি হিমাগারে সংরক্ষিত ৭০ ভাগ আলু অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে গেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব আলু বিক্রি না হলে পরে তা আর বিক্রয়যোগ্য থাকবে না। কিছু আলু হয়তো বীজ হিসাবে বিক্রি হবে কিন্তু এত পরিমাণ আলু তো আর বিক্রি করে শেষ করা যাবে না। সরকার আলুর সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিলেও তার কোনো নির্দেশনা পায়নি হিমাগার মালিকরা।

আলুর বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্য কার্যকরের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে সরকার গৃহীত নির্দেশনা এখনো এসে পোঁছায়নি। নির্দেশনা পৌঁছালে তা কার্যকরের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা কার্যকরের জন্য পাঠানো হবে। চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আলুর সর্বনিম্ন মূল্য কার্যকর করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. আজিজুর রহমান জানান, সরকারি নির্দেশনা না আসায় তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে