এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান ও কর্মচারীদের হাফপ্যান্ট পরে কাজ করাসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগে নবনির্বাচিত হল সংসদ ভিপি আজিজুল হকের তোপের মুখে পড়েছেন ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হাফ প্যান্ট পরে কাজ করা যাবে না।
খাবারের মান উন্নয়নসহ পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য ম্যানেজারকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন ভিপি আজিজুল হক। তা না হলে ১৫ দিন পর ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সূর্য সেন হলের ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করে ভিপি নানা অব্যবস্থাপনা পান। এ সময় তিনি ম্যানেজারকে এসব বিষয়ে অবহিত করে আলটিমেটাম দেন।
পরিদর্শনকালে ভিপি আজিজুল হক ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ নোমানকে বলেন, ‘আপনারা আলু খাওয়াচ্ছেন পচা, ডালের মধ্যে ডাল নেই। আপনারা ৪২ বছর ধরে ক্যাফেটেরিয়া চালানোর পরও ন্যূনতম পরিবর্তন আমরা দেখিনি, তাহলে আপনাদের কেন রাখব?’
ভিপি বলেন, ‘আপনারা তিনটি কারণ বলেন, কেন আপনাদের রাখব?’ এখন কেউ ফাও খায় না, টাকা কম দেয় না, তাহলে খাবারের মান কেন ভালো হবে না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আজিজুল হক বলেন, ‘রান্নাঘরে আপনার কর্মচারীদের মাথায় ক্যাপ নেই, তারা অভিযোগ করেছেন তাদের ক্যাপ কিনে দেননি। রান্নাঘরের আনাচ-কানাচে সিগারেটের ফিল্টার পড়ে আছে। আরো দেখেছি, কয়েকজন কর্মচারী হাফপ্যান্ট পরে কাজ করছে। রান্নাঘরে যদি হাফপ্যান্ট পরে কাজ করে, তাহলে আপনার (ম্যানেজার) থাকার কী দরকার? কীসের ম্যানেজারি করেন? আপনি ম্যানেজারিয়াল নিয়ম জানেন কোনো?’
সূর্য সেন হলের ভিপি আজিজুল হক ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ফাজলামি করার দরকার নাই।
আপনি এবং আপনার মালিকসহ টোটালি বসে সিদ্ধান্ত নিন, ১৫ দিনের মধ্যে আপনারা শিক্ষার্থীদের জন্য কী করতে পারবেন, এটা মানুষের মুখে মুখে হয়ে যেতে হবে— সূর্য সেন হলের ক্যাফেটেরিয়া ভালো হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে যদি না হয়, তাহলে ১৫ দিন পরে আপনারা চলে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকুন। এর বাইরে কোনো কথা হবে না।’
এদিকে সূর্য সেন হলের ভিপি আজিজুল হকের ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও’র কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ একে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন ভিপির ভাষা আরেকটু ভালো হওয়া দরকার ছিল।
এ বিষয়ে পরে সূর্য সেন হলের ভিপি আজিজুল হক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আজকে সন্ধ্যায় আমাদের হল সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সূর্য সেন হল ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শনে যাই। গিয়ে বেশ কয়েকটি অসংগতি পরিলক্ষিত হয়, যেমন— খাবার পরিবেশন ও রান্নার সঙ্গে সম্পৃক্ত কারো মাথায় কোনো ক্যাপ ছিল না। রান্নাঘরে কয়েক শ সিগারেটের ফিল্টার ছিল এবং রান্নার সময় সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে, যা আমাদের দেখে কর্মচারীরা ফেলে দেন। হাফপ্যান্ট পরে রান্না করছিলেন কর্মচারীরা। এ ছাড়া এমন কিছু আইটেম তালিকাভুক্ত করা ছিল, যা আসলে সেদিন রান্নাই হয়নি। সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা ছিল— ডালের মধ্যে তেমন কোনো ডাল খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে অবাক হবেন, দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে একই ব্যক্তি এই ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করছেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে খুব বেশি অপারগ না হলে শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়া এড়িয়ে চলেন। এর আগে কমপক্ষে ২০ বার সতর্ক করা হলেও তারা এমন আচরণ দেখায় যেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য হল প্রশাসন বা ছাত্র প্রতিনিধি কেউ যথেষ্ট নয়।’
হল সংসদের এই ভিপি বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি, তাদের সতর্ক করার সময় আমার ব্যবহার কিছুটা উচ্চবাচ্য হয়ে গিয়েছিল। যদিও যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা জানেন— এখানে সব ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়া নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। সামনে থেকে আমরা আচরণে আরও সংযত ও মার্জিত থাকার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।’