এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঘড়ির কাঁটায় বিকেল পৌনে চারটা। আন্দোলন করছিলেন মাহামুদুর রহমান সৈকত। ঠিক তখনই খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পুলিশ। মুহূর্তেই নিভে যায় প্রাণ। তবে ঢাকার বাইরে থাকায় ছেলের মুঠোফোনে বারবার কল করেন বাবা। একপর্যায়ে কল ধরে সৈকতের মৃত্যুর খবর জানান অচেনা এক ব্যক্তি। একইসঙ্গে দ্রুত হাসপাতালে আসতে বলেন। নয়তো লাশও পাবেন না বলে জানান।
হৃদয়বিদারক এমনই ঘটনা উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তীর মুখে। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তিনি। ৪৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল।
জবানবন্দিতে সাবরিনা বলেন, আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন। নিজেও একজন জুলাইযোদ্ধা। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজ শেষে বাসা থেকে খেয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার নুরজাহান রোডের দক্ষিণ মাথায় আন্দোলনে যান সৈকত। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে খুব কাছ থেকে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ওই সময় আমার বাবা গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে সৈকতের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করেন। তবে ফোনটি রিসিভ করেন একজন অপরিচিত ব্যক্তি।
আমার বাবাকে ওই ব্যক্তি জানান, এই ফোনটি যার তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দ্রুত হাসপাতালে আসেন। না হলে লাশও পাবেন না। তখন ফুফাতো ভাই সাইফুর রহমান হায়দারকে হাসপাতালে যেতে বলেন আমার বাবা। খবর পেয়ে আমিও ছুটে যাই।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাবরিনাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জেরায় তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ২০তম কার্যদিবসে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৯ জন। তবে সাধারণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এখানেই শেষ বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। পরবর্তীতে নেওয়া হবে জব্দ তালিকার সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর তারেক আবদুল্লাহ ও মামুনুর রশীদ।
এদিকে, আজ সকালেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দি দিচ্ছেন সাক্ষীরা।