শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:৩৭:৪১

মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা : দ্য টেলিগ্রাফ

মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা : দ্য টেলিগ্রাফ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যাতে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনার আদেশেই দমন অভিযানের সময় নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসনের অবসানকালে যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তাতে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারান।

আন্দোলনের সূত্রপাত ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। একই দিনে ঢাকার এক ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

তার শাসনামলে ব্যাপক ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ ওঠে—যার মধ্যে শিশুদের গুমের ঘটনাও ছিল।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তাদের দলে ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ ও সাক্ষ্য রয়েছে, যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি ওই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার সরাসরি নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’

আদালত ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালান এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। তিনি এক কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং তার বর্বরতার জন্য কোনো অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি।’

রবিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা করা হতে পারে।

দোষী প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে, যা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দাবি, বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার জবাবেই পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।

শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও চলছে।

এদিকে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন—তিনিও বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শেখ হাসিনার প্রভাব ব্যবহার করে পরিবারের জন্য জমির প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তাতে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এখন ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে