রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৫৪:৩৩

জাল সনদে ১০ বছর ধরে চাকরি অথচ বয়ান দিতেন হালাল উপার্জন নিয়ে!

জাল সনদে ১০ বছর ধরে চাকরি অথচ বয়ান দিতেন হালাল উপার্জন নিয়ে!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জাল সনদ ব্যবহার করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির পদে চাকরি করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত ইসলামি বক্তা মোহাম্মদ ফখরুল আলম। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে তার জমাকৃত সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।

ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ফখরুল আলম ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন মহাপরিচালক শামীম মো. আফজালের মেয়াদে সহকারী সম্পাদক (৯ম গ্রেড) পদে যোগদান করেন। 

তিনি ২০০৮ সালে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জনের দাবি করে জাল সনদ দাখিল করেন। তার নিয়োগের আগে থেকেই ফাউন্ডশনে তার যাতায়াত এবং দাপট চলতে থাকে। ওই সময় তার নিয়োগ ছিলো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তার সংশ্লিষ্ট পদটি ফাউন্ডেশনের অর্গানোগ্রাম ও সার্ভিস রুলে অন্তর্ভুক্তির আগেই এবং মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেয়া হয় ।

গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে প্রেরিত (সূত্র নং: জাতীয় বি:/পরীক্ষা/সনদ/৪৪৯/২০০৫/৯৪৭০) চিঠিতে জানানো হয় ফখরুল আলমের পরীক্ষার ফলাফল ‘ফেল’ এবং তার জমাকৃত বিএ (অনার্স) সনদ জাল হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

এই তথ্য পাওয়ার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ২১ অক্টোবর জারি করা বরখাস্তের অফিস আদেশে বলা হয়-‘আপনার বৈধ সার্টিফিকেট না থাকা অবস্থায় অসত্য তথ্য দিয়ে নিয়োগ লাভ করেছেন; যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাকরিবিধিমালা ১৯৯৮-এর ৩৮(১)(ক)(গ) ও ৩৯(খ)(চ) ধারার আলোকে অসদাচরণ ও প্রতারণার দায়ে দোষী হওয়ার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য ১৬ অক্টোবর থেকে আপনাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিগত সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অনুরোধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সনদ যাচাইয়ের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ফখরুল আলম আশিকী ‘ইসলামি বক্তা’ হিসেবে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউব ও সামাজিক মাধ্যমে ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান। এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও তাকে একাধিকবার বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে। তার আলোচনায় প্রায়ই ‘হালাল উপার্জন ও নৈতিকতার গুরুত্ব’ ছিল অন্যতম মূল বক্তব্য, অথচ নিজেই জাল সনদে সরকারি চাকরি করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, ফখরুল আলমের নিয়োগ সদ্য ভারতে পলাতক একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানের তদবির এবং প্রচণ্ড চাপে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত শুরু হলেই ওই সংস্থার কার্যালয় থেকেই ফোনে তদন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ আসত বলেও সূত্র জানায়।

ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুধু ফখরুল আলম নন—সংস্থাটিতে কর্মরত আরো অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ জাল বা ত্রুটিপূর্ণ। এদের বেশিরভাগই নিয়োগ হয়েছে সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক শামীম মো. আফজালের সময়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে