এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : একদল প্রভাবশালী ব্যাংক লুটেরার কাণ্ডে আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে ব্যাংকিং খাতে। সেই সঙ্গে তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেউলিয়া হতে বসা ব্যাংকগুলো থেকে চাকরি হারানো হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কারো চাকরিচ্যুতি ঘটেছে, কারো ক্ষেত্রে ঘটেছে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ যা আদতে জোরপূর্বক ছিল, আবার অনেকের চাকরি যাওয়ার পথে। সবমিলিয়ে এই চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের জীবনে রীতিমতো মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
চাকরিচ্যুতির এসব ঘটনা ঘটছে ২০২০ সাল থেকে। করোনার সময় চাকরি স্থিতিশীল রাখার কথা থাকলেও সেই সময় থেকেই শুরু হয় বিশাল পরিসরের ছাঁটাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মহামারি চলাকালে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক তিন হাজার ৩১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে। এই দুর্ভোগ আরো তীব্র হয় সরকার পরিবর্তনের পর।
বিভিন্ন ব্যাংকে যোগ্যতা যাচাইয়ের নামে শুরু হয় নির্বিচার শুদ্ধি অভিযান যার শিকার হন বহু ব্যাংকার। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন গত তিন মাসে। ইসলামী ধারার আরো কয়েকটি ব্যাংক আল-আরাফাহ ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক—এসব মিলে আরো দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা ছাঁটাই হয়েছেন। সব মিলিয়ে সরকার পরিবর্তনের পর এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি ব্যাংকার চাকরি হারিয়েছেন।
একসময় ব্যাংকের গাড়িতে চড়ে অফিসে যাওয়া মানুষগুলো আজ রিকশা বা হেঁটে চলেন। কোট-প্যান্ট-টাই পরা ব্যাংকারদের অনেকে এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া তো দূরের কথা, অনেকেই চিকিৎসার খরচও বহন করতে পারছেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি করোনার সময় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ছয় ব্যাংকের তিন হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন তিন হাজার ৭০ জন।
১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই, ২০১ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যায়ভাবে বরখাস্তদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও কোনো ব্যাংকই তা মানছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা তো আগেই ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। এর পর ওই বিষয়টা এখন আদালতে বিচারাধীন। আদালত একটি রুলও দিয়েছিলেন। এখন পুরো বিষয়টি আদালতের নিয়ন্ত্রণাধীন। যদি কোনো ব্যাংক সেই নির্দেশনা না মানে তাহলে সেটা আইনিভাবেই সমাধান করতে হবে চাকরিহারা কর্মকর্তাদের।’
প্রসঙ্গত, পাঁচ ব্যাংক মার্জ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকেই দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে ব্যাপক ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।
পাওয়া তথ্য মতে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে মোট দুই হাজার ২৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আল-আরাফাহ ব্যাংক থেকেই ৫৫০ জন কর্মকর্তা চাকরি হারান।
গত নভেম্বরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ২৬২ জন কর্মকর্তা, এসআইবিএলে এস আলম গ্রুপের আমলে নিয়োগ পাওয়া ৫৭৯ কর্মকর্তা এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫৪৫ জন কর্মকর্তা চাকরি হারান।-কালের কণ্ঠ