বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৮:১৫

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে যারা থাকছেন

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে যারা থাকছেন

ঢাকা : আজ বুধবার পৌনে ১০টায় বাংলাদেশ বিমানে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রায় ৪ ঘণ্টা যাত্রা বিরতির পর বৃটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে মধ্যরাতে নিউইয়র্ক পৌঁছবেন তিনি। এবারে যুক্তরাষ্ট্রেই আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে শতাধিক সদস্যের একটি সরকারি প্রতিনিধি দল (রাষ্ট্রীয় খরচে) এবং ১০৯ জনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল (নিজ খরচ তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়) নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন।

সরকারি প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীসহ ৬ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, ৩ উপদেষ্টা, ৫ সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা ও নিউ ইয়র্কে একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছাড়াও জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা স্বতন্ত্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও এ সময় নিউ ইয়র্কে থাকছেন। তারা জাতিসংঘের আমন্ত্রণে ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

লিমোজিনের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ : প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের  প্রত্যেকের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভাড়া করা লিমোজিনের ব্যবস্থা করা হয়। এবারও সেই লিমোজিন থাকছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এর ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, এবারও লিমোজিন ভাড়া নেয়া হয়েছে। তবে প্রত্যেকের জন্য নয়। এক গাড়ি একাধিক সফরসঙ্গী শেয়ার করবেন। তাছাড়া এবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর ও প্রতিনিধি দলের জন্য নির্ধারিত হোটেল খুব কাছাকাছি রাখা হয়েছে, যাতে তারা গাড়ির বদলে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যারা- পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফারাজী, আফম রুহুল হক এমপি, ন্যাপ সাধারণ সম্পদক এটিএম এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরন রায়, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের কনভেনর ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বি-বাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, আওয়ামী যুবলীগের উপ-মহিলা সম্পাদিকা জাকিয়া সুলতানা শেফালী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সুপ্তভূষণ বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি কেএম শহীদুল্লাহ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক কোহেলী কুদ্দুস, যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জাকিয়া পারভিন খানম।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সফরসূচি: প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে আগামী ৬দিন ব্যস্ত সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন তার সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। যাওয়া আসা মিলে সফরটি ৮ দিনের হবে জানিয়ে ঢাকা ও নিউ ইয়র্কের কর্মকর্তারা জানান, এ সময় জাতিসংঘে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়াও তিনি একাধিক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে এবার কোন একান্ত বৈঠক হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুই নেতার মোট পাঁচবার দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ওবামার ব্যক্তিগত অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর আইএসআইএল ও সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ শীর্ষক একটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এবারে তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ সম্পর্কিত সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়নে আইসিটি পুরস্কার পাচ্ছেন। সফরকালে পুরস্কার দুটি গ্রহণ করবেন তিনি।

২৮ সেপ্টেম্বর অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে ৭০তম সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেবেন। একই দিনে তিনি অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো এবারও শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলা ভাষায় ভাষণ দেয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে মাতৃভাষায় ভাষণ দেবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।

পর দিন প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং’র আমন্ত্রণে ‘গ্লোবাল লিডারস মিটিং অন জেন্ডার ইক্যুয়েলিটি এন্ড ওমেনস এমপাওয়ারমেন্ট: এ কমিটমেন্ট টু এ্যাকশন’-এ যোগ দেবেন। একই দিন তিনি বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংলাপে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তুলে ধরে ২০১৫ পরবর্তী বিশ্বের উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে অধিবেশনের প্লেনারি সেশনে ভাষণ দেবেন।

এতে তিনি টেকসই উন্নয়ন ও এ লক্ষ্যে সরকারের কর্মকাণ্ডে জাতীয় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের হিলটন মিডটাউন হোটেল তাঁর সম্মানে প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী । ২৮শে সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তিরক্ষা সম্পর্কিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, রুয়ান্ডা, উরুগুয়ে ও ইউএন এসজি। ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত আইএসআইএল ও সহিংস জঙ্গিবাদ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দেবেন। তিনি এমডিজি থেকে এসডিজিতে উত্তরণ: বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এতে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এদিন তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।

সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কলম্বিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক ওয়ার্ল্ড লিডারস ফোরামে ভাষণ দেবেন। একই দিন তিনি হোটেল ওয়ার্ল্ডফ এস্টোভিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্টাল্ডিং অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ ছাড়া তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একদিন যাত্রাবিরতি করবেন এবং সেখানে ২রা অক্টোবর তাঁকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তিনি ৩রা অক্টোবর দেশে ফিরবেন।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে