বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:৫৯:১৩

তারেক রহমানের জন্মদিন আজ

তারেক রহমানের জন্মদিন আজ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৬৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অনবদ্য পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি এখন বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে দলটির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দেশে দীর্ঘ দেড় দশক পরে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। ১/১১-এর সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়নের কারণে প্রবাসে ঠাঁই নেন তিনি। তবে সুদূর প্রবাসে থেকেও দেশ, দল ও সরকার নিয়ে বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে সবার নজর কেড়েছেন তিনি।

শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েই তিনি দায়িত্ব শেষ মনে করেননি। হাসিনার পলায়নের পর দেশে যখন সরকার শূন্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীহীন হয়ে পড়েছিল, তখন তিনিই নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসানোর। এ ছাড়া পূজার সময় মন্দিরে মন্দিরে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান, বন্যায় উদ্ধার-ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। 

দীর্ঘদিন পর গত বছর এবং এবারও অন্য রকম পরিবেশে তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু তারেক রহমান নিজেই গত বছরের মতো এবারও জন্মদিনের কোনো অনুষ্ঠান পালন না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু নির্দেশই নয়, দিয়েছেন কঠোর বার্তাও। 

গত মঙ্গলবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২০ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা, পোস্টার, ব্যানার লাগানো, আলোচনা সভাসহ কোনো ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান বা উত্সব পালন করা যাবে না। ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপির সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের দলীয় নির্দেশনাটি লঙ্ঘন না করার জন্য জোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি করার পর তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন বিএনপির। সুদূর লন্ডনে থেকে অত্যন্ত সুচারুভাবে সংগঠন পরিচালনা করে চলছেন বিরামহীনভাবে। সেই ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে। 

প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবিরাম পরিশ্রম করে চলছেন। তিনি যত দূরেই থাকুন না কেন, নেতাকর্মীসহ দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো মানুষের যেকোনো বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশের তৃণমূল আবারও ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে পেয়েছেন জনপ্রিয় নেতার আসন। বিএনপি ও বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশে বিএনপির গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামছে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। জনগণকে আপন করে কাছে টেনে নেওয়ার জাদুকরী কারিশমাটিক নেতৃত্ব, সম্মোহনী ব্যবহার আর এসব গুণই তাঁকে বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার অধিকারী করে তোলে। পিতার পথ ধরেই শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন হাটে-মাঠে-ঘাটে। আওয়ামী লীগ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের আক্রোশের শিকার হয়ে তিনি ১/১১-তে গ্রেপ্তার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। সেই ভয়াবহ নির্যাতনের ক্ষত আজও তাঁকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এখনো তিনি লন্ডনে চিকিত্সাধীন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন তারেক রহমান। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল থেকে তিনি মাধ্যমিক ও ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে, পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। 

তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বড় মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান কৃতিত্বের সঙ্গে বার অ্যাট ল অর্জন করেন।

তারেক রহমান কিশোর বয়সে ১৯৮১ সালে বাবাকে হারালেও পড়াশোনার পাশাপাশি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁর মায়ের সহচর হিসেবে অংশ নেন। বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। 

মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেওয়ার আগেই তারেক রহমান রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচন ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তাঁরই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অনবদ্য পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। 

দীর্ঘদিন দলের রাজনীততে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করার পর ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ কাউন্সিলেও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে প্রেরণ করার পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে