জমি কেনাবেচা বা দলিলপত্র তৈরি করার সময় আমরা প্রায়ই খতিয়ান বা দলিলে এমন কিছু শব্দ দেখি—যেমন ‘চালা ভূমি’, ‘নাল জমি’, ‘চান্দিনা ভিটি’, ‘চিরাগী’, ‘পালাম ভূমি’ ইত্যাদি। তবে এই শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ অনেকেই জানেন না। অথচ জমির প্রকৃত শ্রেণি না জানলে দলিল সম্পাদনের পর ভবিষ্যতে আইনি জটিলতার সম্ভাবনা থাকে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিরাজ প্রামাণিক বলেন, জমির দলিলে ও খতিয়ানে ব্যবহৃত শ্রেণিনির্ধারক শব্দগুলো জমির প্রকৃতি ও ব্যবহারের ধরণ নির্দেশ করে। এই শব্দগুলোর উপর ভিত্তি করে জমির মূল্য, কর এবং ব্যবহার পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। তাই জমি কেনার বা দলিল করার আগে এগুলোর অর্থ ভালোভাবে জানা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘চালা ভূমি’ বলতে বোঝায় কিছুটা উঁচু ও আবাদযোগ্য জমি। সাধারণত পুকুরপাড় বা তুলনামূলক উঁচু জমিতে গাছপালা ও শাকসবজি চাষ করা হয়। এটি আবাদযোগ্য হলেও নিচু জমির মতো নয়। অন্যদিকে, ‘নাল জমি’ হলো নিচু, সমতল এবং ফসলি জমি, যেখানে সাধারণত বছরে ২-৩টি ফসল ফলানো যায়। এটি ধান বা অন্যান্য মৌসুমী ফসলের জন্য উপযুক্ত।
‘চান্দিনা ভিটি’ হলো হাটবাজারে প্রজাদের বরাদ্দপ্রাপ্ত অস্থায়ী বা স্থায়ী অকৃষি জমি। ‘চিরাগী জমি’ হলো নিষ্কর জমি, যা ধর্মীয় বা সামাজিক উদ্দেশ্যে যেমন মসজিদ, কবরস্থান বা আলোকসজ্জার জন্য উৎসর্গ করা হয়। আর ‘পালাম ভূমি’ বলতে বোঝায় বসতবাড়ির পাশে অবস্থিত উঁচু ভিটা জমি, যা সাধারণত সবজি চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিরাজ প্রামাণিক আরও বলেন, জমির প্রকৃত শ্রেণি না জেনে দলিল সম্পাদন করলে তা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির শ্রেণি অনুযায়ী কর, বাজারমূল্য, ব্যবহারযোগ্যতা এবং বিক্রয় প্রক্রিয়ায় পার্থক্য থাকে। তাই সাধারণ মানুষসহ যারা জমি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত, তাদের উচিত এই শ্রেণিগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা।