অনলাইনে আবেদন করে জমির পর্চা সংগ্রহ করা যায়। তবে এরজন্য কয়েকটি ধাপ পূরণের প্রয়োজন পড়বে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বিধা? খতিয়ান বা পর্চা হল তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।
এটি মৌজা-ভিত্তিক দলিল- যাতে মালিকের নাম, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, ধরন এবং খাজনার হার— সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকে।
ভূমি জরিপের সময় তৈরি এই দলিল মালিকানা প্রমাণ করে।
বাংলাদেশে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, বিআরএস-এর মতো বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান প্রচলিত। কোনো কারণে যদি জমির পর্চা হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কিছু নিয়ম মেনে সেটা সংগ্রহ করা সম্ভব।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘স্বয়ংক্রিয় ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (অ্যালামস) মিউটেশন’ পরামর্শক মো. পারভেজ হোসেন বলেন, “এখন ঘরে বসেই অনলাইনে পর্চা বের করা যায়। স্মার্ট ভূমিসেবার কল্যাণে সময়-শ্রম দুটোই বাঁচে।”
অনলাইনে পর্চা সংগ্রহের নিয়ম
প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যান: dlrms.land.gov.bd অথবা স্মার্টফোন অ্যাপ থেকেও সম্ভব।
১. খতিয়ানের ধরন নির্বাচন: ‘সার্ভে খতিয়ান’ বা ‘নামজারি খতিয়ান’ বেছে নিন।
২. ভৌগোলিক তথ্য: বিভাগ, জেলা, উপজেলা সিলেক্ট করুন।
৩. খতিয়ান ধরন ও মৌজা: বিআরএস, সিএস, আরএস ইত্যাদি থেকে ধরন বেছে মৌজা নির্বাচন করুন।
৪. অনুসন্ধান: খতিয়ান নম্বর, মালিকের নাম বা দাগ নম্বর দিয়ে সার্চ করুন।
৫. আবেদন: খতিয়ান পেলে ডাবল ক্লিক করে ‘খতিয়ান আবেদন’ বাটনে ক্লিক করুন।
৬. ব্যক্তিগত তথ্য: এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর দিন।
৭. যাচাই: ‘যাচাই করুন’ ক্লিক করলে নাম-ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে।
৮. আবেদনের ধরন ও ফি: অনলাইন কপি (তাৎক্ষণিক, কিউআর কোডসহ): ১০০ টাকা।
সার্টিফাইড কপি (৭ দিনে, অফিস বা ডাকে): ১শ’ টাকা (ডাকযোগে পাঠাতে অতিরিক্ত ৪০ টাকা পোস্ট ফি)। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি দিয়ে মূল্য পরিশোধ করা যায়।
৯. পেমেন্ট: ক্যাপচা পূরণ করে ওটিপি, পিন দিয়ে কনফার্ম করুন।
১০. ডাউনলোড: মূল্য পরিশোধ হলে পিডিএফ ডাউনলোড করে প্রিন্ট নেওয়া যায়।
এতে মালিকের নাম, অংশ, দাগ, জমির শ্রেণি— সব বিস্তারিত থাকবে।
এভাবে ভূমি অফিসে না গিয়ে বাড়িতে বসেই অনলাইনে জমির পর্চা সংগ্রহ করা যায়। এটি ভূমি মন্ত্রণালয় পরিচালিত একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ সেবা।
অন্যভাবে পাওয়ার উপায়
অনলাইনে না পেলে উপজেলা ‘সেটেলমেন্ট অফিস’ বা জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে যান। ফি দিয়ে সার্টিফাইড পর্চা নেওয়া যাবে সেখান থেকে।
অতিরিক্ত সুবিধা
তথ্য যাচাই, সংশোধনের আবেদনও অনলাইনে করা যায়। মৌজা ম্যাপও পাওয়া যায়। পদ্ধতি স্বচ্ছ এবং দ্রুত। পাশাপাশি হয়রানি কম।
বিভিন্ন খতিয়ানের পরিচিতি
বাংলাদেশে ভূমি জরিপের বিভিন্ন সময়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন খতিয়ান প্রচলিত। সিএস সবচেয়ে পুরানো, আরএস ব্রিটিশ আমলের সংশোধনী, পরে বিএস/বিআরএস চালু হয়েছে যা বর্তমানে প্রচলিত।
সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে): ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮৮-১৯৪০ সালের মধ্যে প্রথম জরিপ।
এসএ (স্টেট অ্যাকুইজিশন): ১৯৫০ সালের ভূমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে রেকর্ড।
আরএস (রিভিশনাল সার্ভে): ১৯০৯-১৯৪৮ সালের মধ্যে সংশোধনী জরিপ।
বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে): ১৯৯০ সালে শুরু।
বিআরএস (বাংলাদেশ রিভিশনাল সার্ভে): ১৯৯৮ সাল থেকে আধুনিক জরিপ, কম্পিউটার প্রিন্টে প্রকাশিত, এখনও চলছে।
বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে): সাম্প্রতিক কালের ডিজিটাল জরিপ।
বিস্তারিত জানতে land.gov.bd দেখুন।