এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময়ের ভোগান্তি, রাজনৈতিক হয়রানি ও একাধিক প্রশাসনিক জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে সিজিপিএ-৪.০০ পেয়ে মাস্টার্সের চূড়ান্ত ফলাফল পেয়েছেন। তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক শিক্ষা সম্পাদক। আজ (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রিভিউ প্রক্রিয়া শেষে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
২০০৭-০৮ সেশনে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছিলেন রফিকুল। প্রথম বর্ষে প্রথম স্থান অর্জনের পরই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে তাকে শিবির–সংশ্লিষ্টতা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকেই পরীক্ষা দিয়ে আবারও প্রথম হন তিনি। অনার্সে ৩.৮০ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন ও গোল্ড মেডেল পান।
২০১৪ সালে বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে আবেদন দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নম্বরপত্র টেম্পারিং ও থিসিস জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়—যার কোনোটিরই সত্যতা পরবর্তী তদন্তে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক চাপে ও শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সরকার পরিবর্তন হলে রফিকুল রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন। রিভিউ কমিটির যাচাই–বাছাই শেষে ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় তার ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও থিসিস পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধিত থিসিস মূল্যায়নের পর আজ প্রকাশিত হয় তার মাস্টার্সের চূড়ান্ত ফলাফল।
ফলাফল পেয়ে আবেগাপ্লুত রফিকুল বলেন, “মৃত্যুর আগে সম্মানটা ফিরে পাওয়ার জন্যই শুধু আল্লাহর কাছে চেয়েছিলাম। আজ সেই দোয়া কবুল হয়েছে।” তিনি প্রশ্ন রাখেন—যারা তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে ভূমিকা রেখেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?
এ বিষয়ে রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “রফিকুল ভাইয়ের ওপর দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী জুলুমের অবসান ঘটল। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, মাস্টার্সে সিজিপিএ-৪.০০—এত ভালো ফলাফল হয়রানির মধ্যেও ধরে রেখেছেন। ১২ বছর পর ফল পেলেন।” তিনি আরও বলেন, বহু ছাত্রশিবির কর্মীই এভাবে একাডেমিক হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন—যা সংখ্যায় অগণিত।
চূড়ান্ত ফলাফলের মাধ্যমে অবশেষে রফিকুল ইসলামের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হলো।