নিউজ ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই অন্ধ। সংসার চলে ভিক্ষা করে। এই অন্ধ দম্পতির রয়েছে ‘অন্ধের যষ্ঠি’। কোলে-পীঠে মানুষ করছেন তারা। কিন্তু অন্ধ মা-বাবার কাছ থেকে কৌশলে শিশুটি চুরি করে নিয়ে যায় সবজি বিক্রেতা হোসনে আরা ওরফে আম্বিয়া ওরফে আলিয়া। এরপর ‘চোখের মণি’কে ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন অন্ধ মা-বাবা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বরের বড় মসজিদের পাশ থেকে শিশু নাঈমকে চুরি করে দূরসম্পর্কের আত্মীয় নিঃসন্তান দুলালের কাছে বিক্রি করে দেয়। সন্তান চুরির পর দৃষ্টিহীন ভিক্ষুক দম্পতি সন্তানসহ তাদের একটি গ্রুপ ছবি বুকে সেঁটে পথে পথে ঘুরছিলেন। তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডিও করেন।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ডালুয়া গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি দল। ১৮ হাজার টাকায় শিশুটিকে স্থানীয় দুলাল মিয়া নামে এক ভ্যানচালকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল ওই নারী।
মায়ের কোলে ফিরে তিন বছরের শিশু নাঈম এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। দৃষ্টিহীন মা সন্তানের কপালে বারবার চুমো খাচ্ছিলেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবাও নাঈমকে বারবার স্পর্শ করছিলেন। শিশুটি দৃষ্টিহীন দম্পতির 'চোখের মণি'। প্রায় এক মাস পর রাজু মিয়া ও শারমিন দম্পতি সন্তানকে ফেরত পেয়ে যেন 'অন্ধের যষ্ঠি' ফেরত পেলেন।
উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ জানায়, রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ভিক্ষা করতেন রাজু ও তার স্ত্রী শারমিন। ২৬ ফেব্রুয়ারি আলিয়া নামে এক সবজি বিক্রেতা কৌশলে নাঈমকে চুরি করে। এরপর একদিন উত্তরার জয়নাল মার্কেটে তার বাসায় রাখে। পরদিন শিশুটিকে নিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় দুলালের কাছে বিক্রি করে দেয়। দৃষ্টিহীন দম্পতির কাছ থেকে শিশুটিকে কিনে এনেছে বলে দুলালকে জানায় আলিয়া।
যেভাবে আলিয়ার সন্ধান
শিশু চুরির পর থেকে উত্তরা ৯ নম্বর এলাকার সব ভিক্ষুক ও সবজি বিক্রেতার খোঁজ নেয় পুলিশ। যেদিন শিশুটি চুরি হয়, সেইদিন থেকে আলিয়া নামের এক সবজি বিক্রেতাও নিখোঁজ। এরপর আলিয়ার সন্ধানে নামে পুলিশ। তাকে দক্ষিণখান থেকে আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে নাঈমকে চুরি করে নাঙ্গলকোটে বিক্রি করে দেয়ার কতা জানায়। শুক্রবার নাঙ্গলকোটে অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেফতার ও শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
দৃষ্টিহীন দম্পতির সন্তান ফেরত পাওয়ার পর ফেসবুকে রাজু, শারমিন ও নাঈমের ছবি নিয়ে একটি পোস্ট দেন তাদের প্রতিবেশী মুদি দোকানি বকুল মিয়া। নাঈমের খোঁজে পুলিশের সঙ্গে বকুল মিয়াও গতকাল কুমিল্লায় যান। নাঈমকে নিজের সন্তানের মতো দেখে আসছেন তিনি।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানান উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার সোহেল রানা।
২৬ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম