রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৩৯:৪৯

দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত

দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত

নিউজ ডেস্ক : সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে দেশকে ‘ধর্মহীন রাষ্ট্রে’ পরিণত করার ‘গভীর চক্রান্তের’ প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করেছে জামায়াতে ইসলামী।

রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আগামীকাল সোমবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে এমন কোন দাবি উঠেনি যে, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, হাতে গোলা কতিপয় রাষ্ট্র ও ধর্ম বিদ্বেষী ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য সরকার যদি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তা কখনো মেনে নিবে না। যে সব ব্যক্তি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে যুক্তি দেখাচ্ছেন তা মোটেই গ্রহণ যোগ্য নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার অনেক দেশেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু মানুষের জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার পরও এদেশে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশে কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানগণ সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। দেশের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণ সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে এর কোন প্রমাণ নেই।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথে এ দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িত। এ আবেগ-অনুভূতিকে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাই সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার গভীর চক্রান্তের প্রতিবাদে এ দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতির সাথে একাত্ম হয়ে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামীকাল ২৮ মার্চ সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল আহ্বান করছি। আমি আশা করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী এবং দেশবাসী এ শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচি সফল করবেন।”

এদিকে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি রবিবার ধার্য থাকলেও তা একদিন পিছিয়ে সোমবার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘শুনানির জন্য রবিবার দিন ধার্য ছিল, কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখলাম একদিন পিছিয়ে ২৮ মার্চ শুনানির দিন রাখা হয়েছে। ওই দিন দুপুর ২টা থেকে ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত শুনানি হবে’।

বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান নিয়ে শুনানি গ্রহণ করবেন।

অন্য দুই সদস্য বিচারপতি হলেন, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় আইনী সহায়তাকারী হিসেবে ১৪ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

আদালতে ড. কামাল হোসেন ও আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক ছিলেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে কার্যত বিরোধী দলবিহীন চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়।


এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত হয়। ২ (ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম।


রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।


এর ২৩ বছর পর রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করে। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়েছিল।


একই সঙ্গে হাইকোর্ট অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১৪ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করে।


তারা হলেন- টি এইচ খান, কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন। এদের মধ্যে এম জহির ও মাহমুদুল ইসলাম মারা গেছেন।


২০১১ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ওই ২ অনুচ্ছেদ আবারো সংশোধন করা হয়। এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ওই বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করে।


শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সম্পূরক রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা ২ (এ) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।


বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালনের পর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে গত বছর অবসরে যান। দীর্ঘদিন পর রুলটির চূড়ান্ত শুনানির জন্য সোমবার দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।
২৭ মার্চ ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে