শনিবার, ০২ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৩৭:০১

এবার শাহজালাল বিমানবন্দরে মার্কিন কোম্পানি!

এবার শাহজালাল বিমানবন্দরে মার্কিন কোম্পানি!

মনজুরুল ইসলাম : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় গত মাসেই যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এবার বিমানবন্দরটির নিরাপত্তার দায়িত্বে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সরকারকে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিনিধি দল।

তবে কীভাবে দেশটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে যুক্ত হবে, তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন বলেন, চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এভিয়েশন সিকিউরিটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে। এ বাস্তবতায় প্রতিটি দেশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থান এবং সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই এখানকার এভিয়েশন সিকিউরিটি ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে আর কেউ নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপত্তি জানাতে না পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

প্রায় সাত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) মানদণ্ডে বেবিচকের অবস্থান ক্যাটাগরি-২-এ। ফলে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহুল প্রতীক্ষিত নিউইয়র্ক রুটের সরাসরি ফ্লাইট। এ অবস্থায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে যুক্ত হওয়ার আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ।

যদিও বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরাসরি কোনো দেশকে দেয়ার কথা নাকচ করে দিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু চাহিদা রয়েছে। এসব বিবেচনায় রেখেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের চিন্তা করা হচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রস্তাব বিবেচনায় রেখেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হবে। আর পুরো কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বেবিচকের তত্ত্বাবধানে।

গত বছর ১৯ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে গত ৮ মার্চ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্যও। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব অনুযায়ী, গত ২১ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণকাজের জন্য যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বেবিচক। চুক্তি অনুযায়ী, রেডলাইন বিমানবন্দরে তিন ধরনের কাজ করবে। পরামর্শ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি তদারকের পাশাপাশি বিমানবন্দরে যেসব জনবল আছে তাদের পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। আগামী দুই বছরের জন্য রেডলাইনকে এ দায়িত্ব দেয়া হলেও ছয় মাস পর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বেবিচক। ক্যাটাগরি উন্নয়ন-সংক্রান্ত নিরীক্ষা করতে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের এফএএ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। সফরকালে নিরীক্ষা দলটি বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি এ বিভাগকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার তাগিদ দেয়। একই সঙ্গে ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন বিভাগে দক্ষ জনবল নিয়োগ  এবং অবিলম্বে অদক্ষ ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টরদের বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়।

এফএএ নিরীক্ষা দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অযোগ্য, অদক্ষ, শারীরিকভাবে অসমর্থ (আনফিট) ও লাইসেন্সবিহীন ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর আছেন, যাদের অনেকের লাইসেন্স-সংক্রান্ত নথি ঠিক নেই। কনসালট্যান্ট পদে যোগ্য কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে নিহত পাইলট সাঈদ কামালের সিমিউলেটর পরীক্ষার ফল নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় প্রতিবেদনে।

ওই ঘটনায় বেবিচকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন বিভাগে যে কজন ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর রয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই শারীরিকভাবে আনফিট। দীর্ঘদিন ধরে তারা ফ্লাইও করছেন না। এফএএর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটা চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থা বহাল থাকলে যেকোনো সময় আকাশে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রসঙ্গত, ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণে ২০০৯ সালে বেবিচককে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি। ওই সময় ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে কিছু শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হলো বেবিচকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) অনুযায়ী জনবল নিয়োগ। নিজস্ব অর্গানোগ্রামের বিষয়টি ২০১২ সাল থেকে প্রক্রিয়ায় থাকলেও এখনো অনুমোদন পায়নি।

এদিকে ক্যাটাগরি-২-এ থাকায় বেবিচক থেকে অনুমোদন নেয়া সংস্থার উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশকিছু দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না। একই কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো উড়োজাহাজেরও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বহুল প্রতীক্ষিত বিমানের নিউইয়র্ক রুটটিতে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। -বিণক বার্তা
০২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে