রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৩:০২

কারাগারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই সম্পর্ক: প্রধানমন্ত্রী

কারাগারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই সম্পর্ক: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মনে করি, একটা লোক অপরাধ করল – তাকে শাস্তি দিলাম – এতেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। একজন ছিঁচকে চোর যদি জেলখানায় গিয়ে আরও বড় চোরদের সংস্পর্শে আসে, তাহলে জেলখানা থেকে বেরিয়ে সে পাকা চোর হয়ে ওঠে। ট্রেনিংটা সেখানেই পেয়ে যায়। এ জন্য কারাগারে বন্দিদের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন সরকারপ্রধান।

রবিবার সকালে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনকালে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য, তাদের উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা... সেজন্য তারা মজুরি পাবে এবং সেটা জমা থাকবে। যখন সে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবে, তখন একটা ছোটোখাটো ব্যাবসা বা দোকান দিয়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার মজুরির একটা অংশ পরিবারকেও দেওয়া হবে। কারণ, অপরাধ করে একজন কিন্ত তার জন্য ভুক্তভোগী হয় গোটা পরিবার।

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে কয়েদিদের জন্য বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে দেয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখানকার হাসপাতালটা আরো বড় করতে হবে। বন্দিদের পাশাপাশি যেন এলাকার লোকজন চিকিৎসা নিতে পারে।

চুরি করে কয়েদীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে পাবলিক টেলিফোনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসে একবার কয়েদীদের বাড়িতে ফোন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে করে তাদের মানসিক শক্তি বাড়বে। এতে চুরি করে ফোন ব্যবহারের প্রবণতাও কমবে।

এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। বাঙালি জাতির কল্যাণে ও মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি বারবার কারাগারে গেছেন। জাতির জনক আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আনতে গিয়েই তিনি বারবার কারা নির্যাতিত হয়েছেন।

কারাগারের ভেতরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের বিষটি গুরুত্বসহ দেখছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে একদল পরিবেশ রক্ষা করার আন্দোলন করে। তারা বলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিবে না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে নাকি এসিড বৃষ্টি হবে। আমরা ছোট বেলা থেকে বাড়িতে দেখি আসছি পানির ফিল্টারের উপরে কয়লা দেয়া থাকে যা পানির দূষণ মুক্ত করে। এখন শুনছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি পরিবেশ ও পানি নষ্ঠ করবে। এদের সব উদ্ভট কথা। জানি না এদের উদ্দেশ্য কী?’

নতুন এ কারাগারে পুরুষ বন্দিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশেই নির্মাণাধীন নারী কারাগার। এর কাজ সম্পন্ন হলে ওই কারাগারে থাকতে পারবে ২৭০ নারী বন্দি।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এ কারাগারে বন্দিদের জন্য থাকছে আধুনিক ব্যবস্থা। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপন করা হয়। প্রায় সোয়া ২শ’ বছর পর কেরানীগঞ্জে নতুন এ কারাগারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে।

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে বন্দিদের পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া শেষ হলে সেখানকার জমিতে পার্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার ও কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর  নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
১০ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে