মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৪৪:২৯

যে কারণে কোথাও নেই মায়া

যে কারণে কোথাও নেই মায়া

পাভেল হায়দার চৌধুরী : দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র অধিপতি। কিন্তু, রাজনীতির নতুন মেরুকরণে মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি কমিটি গঠন করা হলেও তাতে ঠাঁই মেলেনি এই হর্তাকর্তার। ইনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সবার কাছে যিনি মায়া চৌধুরী নামেই পরিচিত।

গত রবিবার (১০ এপ্রিল) ঘোষিত এই দুটি কমিটির কোথাও তাকে কেন জায়গা দিলেন না দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিয়ে দলটির ভেতরে উঠেছে নানা ধরনের গুঞ্জন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি দূর করতে না পারায় এবং ভবিষ্যতেও তাকে দায়িত্বে রাখা হলে একই ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় দলীয় সভাপতি এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দলের নেতৃত্ব হারানোর দিনে আরও একটি দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে মায়া চৌধুরীকে। দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট তাকে খালাস ঘোষণা করলেও সে রায় বাতিল করে মামলা চলার রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনার যে আবেদন করেন মায়া এ দিন সেটিও বাতিল হয়ে গেছে উচ্চ আদালতে।

মায়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, একই দিনে দুটি দুসংবাদ পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। দীর্ঘদিন নগরের রাজনীতিতে থাকার পরে হঠাৎ আসা এ সিদ্ধান্তে ভীষণ মনোকষ্ট পেয়েছেন তিনি।

সূত্রটি আরও জানায়, বঞ্চিত কিছু নেতা রবিবার মায়ার সঙ্গে তার বাসভবনে গেলেও নতুন কমিটির কোনও নেতা তার সঙ্গে দেখা করেননি।এদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেও তার চেহারা ছিল বিষণ্ন। তার ব্যক্তিগত এক কর্মকর্তা জানান, যারা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন সবাইকে ভালো করে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়েছেন মায়া।

এসময় কমিটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তাদের বলেন, কমিটি ভালো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, মায়া চৌধুরী নগরের যে কোনও অংশে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বার্তা পৌঁছেছিল যে, মায়া চৌধুরীকে আবারও নগর রাজনীতির সংগঠকের দায়িত্ব দেওয়া হলে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বে মহানগর আওয়ামী লীগ। তাই সংগঠনকে দলাদলি মুক্ত রাখতেই ঢাকা মহানগরে নতুন নেতৃত্ব আনাটাই উপযুক্ত ভেবেছেন দলের সভাপতি।

সূত্র জানায়, প্রথমে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকতে চাননি মায়া চৌধুরী। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে যে কোনও অংশের দায়িত্বে থাকতে বার বার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু তার এই আগ্রহকে আর গুরুত্ব দেননি শেখ হাসিনা। সংগঠনকে কোন্দলমুক্ত রাখার জন্যেই ঢাকা মহানগরের কোনও দায়িত্বে তাকে রাখতে চাননি শেখ হাসিনা।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন না। এটিও নগরের রাজনীতি থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।

শুধু তাই নয়, নগরের রাজনীতিতে থাকতে চেয়েছেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক হাজী মো. সেলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন। ভীষণ আগ্রহ থাকলেও এদের কাউকেই নতুন কমিটির মূল দায়িত্বে রাখা হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এদের ব্যাপারেও দলীয় সভাপতির কাছে তথ্য ছিল দায়িত্ব দেওয়া হলে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন স্থবিরতা বিরাজ করছিল। নগরের রাজনীতিকে ঘিরে একাধিক বলয়ের তৈরি হওয়ায় দলের ভেতরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। শেষ দিকে তা চরম আকার ধারণ করে।

জানা গেছে, শুধুমাত্র মহানগরের রাজনীতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মায়া চৌধুরীসহ পুরনো নেতাদের কমিটির বাইরে রাখা হয়। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন যাদের ওপর নগরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার কেউ রাজনীতির মাঠে তেমন অভিজ্ঞ নন, তবু দলাদলিমুক্ত থাকবে এই ভেবে তাদের ওপর আস্থা রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এ কারণেই মায়ার পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের মূল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কামরুল, হাজী সেলিম ও সাঈদ খোকনকেও।

নতুন কমিটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন,‘ভালো, ভালো’। তবে আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। একই কথা বলেন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামও। ‘ভাল হয়েছে’ মন্তব্য করেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকনও। -বাংলা ট্রিবিউন
১২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে