রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৩৭:১১

'আগাম নির্বাচন হলেও বিএনপির লাভ হবে না'

'আগাম নির্বাচন হলেও বিএনপির লাভ হবে না'

মাহমুদ আজহার :  ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচন হলেও তাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার।

তিনি বলেন, ‘বিগত পৌরসভা, উপজেলা ও ইউপির মতোই সংসদ নির্বাচন হবে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। তাই আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে কিংবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চাই। আশা করি, ওই নির্বাচন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।’

প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সরকার ২০১৯ সাল কেন আগামী ৬ মাস পরেও যদি নির্বাচন দেয়, তাহলে ২০-দলীয় ঐক্যজোটের লাভ কী? আগাম নির্বাচন দিলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, যে পর্যায়ে ইউপিসহ পেছনের নির্বাচন হয়েছে, ঠিক একইভাবে সংসদ নির্বাচন হবে। এতে কোনো ভুল নেই। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। অথবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন হোক।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামের মোড়লকে কেন ডাকা হয়? পরিবারের সমস্যা যদি আমরা মেটাতে না পারি, তখনই গ্রামের মোড়লকে সমস্যা সমাধানে ডাকা হয়। আমরা তো সমস্যা মেটাতে পারলে গ্রামের মোড়লের প্রয়োজন ছিল না। পারিনি বিধায় তাদের ডাকা প্রয়োজন। সরকার তো নিজেই জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’

গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, ‘এ সরকার আগে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছিল, এখন সরকার ২০৪০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করছে। সরকার সংবিধানে যেসব সংশোধনীগুলো এনেছে, তাতে আগামীতে কোনো বিরোধী দল নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবে না। এ অবস্থায় আমরা কোনো দিনই এ সরকারের অধীনে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারব না। আমরা মনে করি, জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা কিছু পরামর্শ দিতে পারব। সরকারি দলও দিতে পারবে। সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী মাঠে নামাতে পারব। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যা দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ সরকারের কাছে দাবি আদায়ে আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা অন্য কোনো পথের কথা বলতেও পারি না। চিন্তাও করতে পারি না। স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের দাবি না মানলে আন্দোলনের মাধ্যমে মানতে বাধ্য করতে হবে। অবশ্য অতীতে আমাদের আন্দোলনে কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশা করি, আগামী দিনে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দেবেন। এরপর যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে, তাতে বিএনপির পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের মানুষও অংশ নেবে। আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছে যাব।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তাদের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, তা স্পষ্ট হয়েছে। শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিক মহলও স্বীকার করেছে, বিগত সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সুতরাং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আমরা নির্বাচন চাই, মানুষ যাতে নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারে। ১৯৯১ সালে যে ধরনের ভোট হয়েছিল। ২০০১ পর্যন্ত নির্বাচনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। আমরাও মনে করি, এই দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন পদ্ধতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনীতিক অস্থিতিশীলতার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এখনো স্থবির হয়ে আছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, সামগ্রিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। আজকে যদি আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকত, তাহলে এ অবস্থা হতো না। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমে যেই ক্ষমতায় আসুক, সমস্যা নেই। জনগণ তাদের গ্রহণ করে নেবে। মানুষ ভোটের অধিকার চায়। তবে সরকার নিজেও জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য এ সরকার আর কোনো দিনই সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না।’ আমরা আগাম নির্বাচন চাই। আমার একটা আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রী প্রায় বলে থাকেন, আমার পিতা দেশটাকে স্বাধীন করেছে। তাহলে উনার উচিত, পিতা যে দেশ স্বাধীন করেছেন, এ দেশ যেন ধ্বংস না হয়, তার ব্যবস্থাগ্রহণ করা। এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উনার বিশেষ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। উনি যদি তা পালন করেন, তাহলে উনিও একটি ইতিহাসের পার্ট হয়ে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার নির্বাচিত নয়। এ কারণে এমপিরা বিভিন্ন সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন কোনো কাজ করছে না। বিভিন্ন বাহিনীর কোনো জবাবদিহিতা নেই। প্রত্যেকেই নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করছে। প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এই অযুহাতে সে একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। এতে জনগণ ও প্রশাসনও সাফার করছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পিতা এদেশকে স্বাধীন করেছেন। সবকিছু রক্ষা করার দায়িত্বও উনার আছে। তা যদি প্রধানমন্ত্রী পালন করেন, দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকড হয়েছে বলা হচ্ছে। সুইফ কোড হ্যাক করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এটা পরিকল্পিত চুরি। বাংলাদেশের রাজকোষে হাত পড়েছে। এ রকম প্রতিটি স্তরে হাত পড়েছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে সবকিছুই। বাংলাদেশের মানুষ সবই জানে, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। সুতরাং এ অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না।’-বিডিপ্রতিদিন
১৭এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে