মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৪৮:৪৩

'আমাদের জন্য পরিণতি ভালো হবে না'

'আমাদের জন্য পরিণতি ভালো হবে না'

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী(বীরউত্তম): শুভ নববর্ষ। জানি না বছরটি কেমন যাবে। তবু বছরটি ভালো যাক আশা করতে দোষ কী? অনেকে মনে করে বাঙালি কৃষ্টি-সভ্যতা-সংস্কৃতির দিক থেকে পয়লা বৈশাখ অনেক গভীরে শিকড় গেড়েছে। কিন্তু কেন যেন আমার তেমন মনে হয় না। আমার মনে হয় পয়লা বৈশাখ রংবেরঙের ফানুশে যত উজ্জ্বল হৃদয়ের গভীরে তত নয়। পয়লা বৈশাখ রাস্তাঘাটে লোকসমাগম ছিল প্রচুর। সেখানে হৃদয়ে ধারণ করা থেকে দেখানোর প্রবণতাই ছিল বেশি। সরকারি বাধানিষেধে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তবু বাঙালির প্রাণের পয়লা বৈশাখ নিরাপদে পার হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সরকারি নির্দেশে ৫টার পর ঘরে ফেরা, মুখোশ পরা বারণ, যে যাই বলুন এসব দেশে সুস্থিতির লক্ষণ বহন করে না। বরং শঙ্কা আর উত্কণ্ঠাই প্রমাণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুখোশ পরায় বিধিনিষেধ শুনে বিস্মিত হয়েছি।

একসময়ের অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বা দুই দিন আগে ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ডেপুটি হাইকমিশনারের বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে মুখোশ পরে তার বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করতে দেখে বাচ্চাদের কাছ থেকে মুখোশ নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যখন খেলা করছিলেন তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ নিয়ে তার কাছে দূত আসে। তিনি সে রাতেই পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে শপথ নেন। তাই আমার কাছে মুখোশ পরায় নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই আশ্চর্য লেগেছে। তবুও আনন্দের মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ শেষ হয়েছে সেই ভালো। এখন পরের দিনগুলো নিয়েই যত ভাবনা। কথায় আছে— যার শেষ ভালো তার সব ভালো।

এখন ইলিশ না হলে মনে হয় পয়লা বৈশাখই হয় না। আবার পান্তা ভাতে ইলিশ! কী এক আজব ঘটনা! ছোটবেলায় ভাইবোনেরা গোলমাল করলে বাবা বলতেন, ‘বেশি গোলমাল করলে পান্তা ভাতে ঘি ঢেলে দেব। দেখবি মুখ পুড়ে যাবে।’ আমরা ভয়ে অস্থির থাকতাম। বড় হয়ে দেখেছি মানুষ গরম ভাতে ঘি খায়, ঠাণ্ডা ভাতে নয়। পান্তা ভাতে তো নয়ই। দেশের গরিব-দুঃখীরা পেটের জ্বালায় পান্তা খায়। আর সামর্থ্যবানেরা সেই গরিবদের ব্যঙ্গ করতেই কি ইলিশ দিয়ে পান্তা খায়? সেদিন পত্রিকায় দেখলাম ৪ মণ ধানে একটা ইলিশ! আমি ’৬০-৬২ সালে বেশ কয়েক বছর একনাগাড়ে বাজার করেছি। তখন পাঁচ সিকা-দেড় টাকার বেশি দামে বাজারে ইলিশ পাওয়া যেত না। দেড় টাকার ইলিশের ওজন হতো পৌনে দুই-দুই সের। তখন ধানের দাম ছিল সাত-আট টাকা মণ। ১ মণ ধানে চারটা ঢাউস ইলিশ, আর এখন ৪ মণ ধানে একটা ইলিশ— কৃষক যাবে কোথায়? যে কৃষক দেশকে সব থেকে বেশি দিয়েছে সেই কৃষক আজ সব থেকে বেশি নির্যাতিত। গাঁটের পয়সায় ধান ফলিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। আট টাকা ধানের সময় সোনার ভরি ছিল ১২০-১৩০ টাকা। এখন ৫০০-৬০০ টাকা মণ ধানের সময় সোনার ভরি ৪০-৪৫ হাজার। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখন তারা। আবার কি কোনো দিন অর্থনীতির বদল হবে, কৃষকের মুখে নবান্নের হাসি ফুটবে?

কদিন থেকেই পুলিশের প্রতি মনটা খুব খারাপ বা বিক্ষুব্ধ ছিল। কালিহাতীর কোকডহরার বানিরায় অন্যায়ভাবে কয়েকজন দরিদ্র লোককে আদিম বর্বরতায় ক্ষতবিক্ষত করে জেলে পাঠিয়েছিল। বাড়ির গৃহিণী সালেহার চুলের মুঠি ধরে ইটপাটকেল রডের ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। গ্রামের দরিদ্র মহিলা কদিন থেকে সদর হাসপাতালে যন্ত্রণাকাতর পড়ে আছে। নির্যাতিত মহিলার সারা শরীর থেকে তখনো চুয়ে পড়া রক্ত দেখে মনে হয়েছিল, হায়রে কপাল! নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রমের জন্য হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। কিন্তু নারীর ইজ্জত কায়েম করতে পারলাম না। যখন দেশের সরকারপ্রধান একজন নারী, তখন এভাবে নারীর অপমান? কে এর বিচার করবে? তাই স্বাভাবিক কারণেই কালিহাতী থানার পুলিশ ও সাব ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলামের প্রতি মন ছিল ভীষণ বিক্ষুব্ধ। কিন্তু সেদিন রাস্তায় রোদে ঝলসে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশের মুখ দেখে মমতায় বুক কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। এর মধ্যে আবার মেয়ে পুলিশদেরও ট্রাফিক ডিউটিতে দেওয়া হয়েছে। বার বার মনে হচ্ছিল ওরা কিভাবে এই রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। ওরা যদি আমার ছেলেমেয়ে হতো, তখন কেমন হতো। এমনিতেই কুশি মামণি ঘরে আসার পর রাস্তাঘাটে অসহায় বাচ্চাদের দেখলে ব্যথায় বুক দুমড়ে যেতে চায়। কেন যেন বার বার মনে হয় আমার কুশি যদি ওভাবে থাকত, তখন মার আমার কতই না কষ্ট হতো। ওর কথা মনে হলে সত্যিই কেমন যেন লাগে। প্রশাসন দেশের জনগণের মালিক নয়, সেবক। শুধু এটুকু প্রশিক্ষণের সময় তাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া গেলেই পুলিশি জুলুম আপনাআপনিই অনেক কমে যেত।

মনে হয় চৈত্রের শেষ অথবা তার আগের দিন ঢাকার পথে ছিলাম। কুশির সঙ্গে রওনা হওয়ার আগে কথা হয়েছিল। তাই মনটা ছিল খুবই ফুরফুরে। প্রায় ১৮-২০ বছরের পুরনো গাড়ি অনেক সময় ভালো ঠাণ্ডা হয় না। মাঝেমধ্যেই মনের অজান্তে ভিতরে ভিতরে অনুযোগে গুমড়ে মরে। যাদের হতে দেখেছি, একসময় যারা ১০-২০ টাকার জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকত, এখন আশপাশ দিয়ে তাদের গাড়ি গেলে ঠাণ্ডা লাগে। সেদিন ছিল রোদের তাপ খুব বেশি। একদিকে লু বইছিল, অন্যদিকে ধু-ধু মরীচিকা। এ রকম এক অবস্থায় শহরের বাইরে রাস্তা মেরামত করতে দেখি। রাস্তার পাশে চুলায় বিটুমিন জ্বাল করছিল। গাড়ির কাচ খুলে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হাতে ময়লা বলে কেউ কেউ হাত মেলাতে চাচ্ছিল না। বলেছিলাম চিন্তা নেই, কিচ্ছুু হবে না। আরও দু-চার জনের সঙ্গে হাত মেলালে তোমাদের ময়লা তাদের হাতে চলে যাবে। তাই চিন্তা করো না হাত মেলাও। প্রথম যখন গাড়ির কাচ নামিয়েছিলাম গরম হল্কা এসে চোখে-মুখে লেগে পুড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। কোনো কিছু ভাবার সুযোগ পাইনি। কত আর হবে বড়জোর ১০০ গজ এগিয়েছিলাম। কখন যে চোখ থেকে বেশ কয়েক ফোঁটা পানি পড়ে কাপড় ভিজে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি। বার বার মনে হচ্ছিল আমার গাড়ির এসি দুর্বল, তাই বুকে বাজে। এই প্রচণ্ড গরমে যারা আগুন জ্বেলে কাজ করছে তাদের কষ্ট হয় না। শেষ বিচারে আল্লাহর দরবারে যখন দাঁড়াব তখন কী জবাব দেব। তার কাছে তো আমির-ফকির, রাজা-উজির, ধনী-নির্ধনের কোনো তফাত নেই। তখন কী হবে? বুক কাঁপছিল আর চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। আর মনে হচ্ছিল পুরনো দিনের ঘটনা।

সে ছিল ’৭৩-৭৪ সাল...... লোকজনের ছিল প্রচণ্ড চাপ। মোহাম্মদপুরের ছোট্ট বাড়িতে অত লোকের জায়গা হয় না। বসতে পারি না, কথা বলতে পারি না, লোকজনকে আপ্যায়ন করা যায় না। জায়গা নেই, দূরদূরান্ত থেকে লোক এলে তাদের যে একটু বসতে দেব তারও উপায় নেই। প্রতিবেশীরা খুব ভালোবাসত। কিন্তু তার পরও প্রতিদিন গাড়ি-ঘোড়া-লোকজনে যখন রাস্তা ভরে থাকত বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারত না, তখন তাদের কষ্ট হতো। তাই ২০-৩০ বাবর রোডের বাড়িটা পছন্দ হচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন পিতাকে বলেছিলাম, কী বাড়ি দিয়েছেন ভালো করে ১০টা লোক নিয়ে বসতে পারি না। সত্যিই বঙ্গবন্ধু আমায় বড় বেশি ভালোবাসতেন। স্নেহ করতেন, কোনো দিন তার কথা অমান্য না করায় বড় বেশি স্নেহশীল ছিলেন। খুব সম্ভবত মোহাম্মদ সুলতান নামে এক অপূর্বসুন্দর পূর্ত সচিব আর মনসুর আলী বা আবুল মনসুর নামে যুগ্ম-সচিব ছিলেন। দুজনকে ডেকে বলেছিলেন, ‘কাদেরকে অত ছোট বাড়ি দিয়েছ কেন? আমি নিজে গিয়ে দেখেছি সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠা যায় না। দেখেশুনে একটা ভালো বাড়ি দিয়ে দাও, যাতে ও লোকজন নিয়ে বসতে পারে, কথাবার্তা বলতে পারে।’ বাবর রোডের বাড়ি ছিল কবুতরের ঘরের মতো খুপরি খুপরি। মনসুর সাহেব ঘোরাফেরা করে মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠার তিন-চারটি, ধানমন্ডিতে ১ বিঘার দু-তিনটি, গুলশানের দিকে দেড়-দুই বিঘার দু-তিনটি বাড়ি দেখে আমাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ছয়-সাতটি বাড়ি দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠার দুটি এবং ধানমন্ডিতে ১ বিঘার দুটি বাড়ি পছন্দ হয়েছিল। যেটিতে উঠব সে বাড়ির কাগজ পাঠিয়ে দেবেন এই ছিল কথাবার্তা। মা তেমন কাগজপত্রে শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু তিনি স্বশিক্ষায় ছিলেন আমাদের সবার ওপরে। বাড়িতে অসুবিধা হয়, লোকজনের জায়গা হয় না তা তিনিও বুঝতেন। বাড়ি বদলের চেষ্টা করছি তা তিনি শুনেছিলেন। মা-বাবাকে বলেছিলাম, বাড়িটা বদল করা দরকার। একদিন বিকালে বাড়ি ফিরেছি। হঠাৎ বারান্দায় এসে মা বললেন, ‘বজ, তুই তো বাড়ি বদল করবি। এক কাজ কর গোপালপুরে যে পাগল তোকে বাবা ডাকে তার বাড়িটা দেখে আয়।’ একটু বড় হয়েই বুঝেছিলাম বিনা প্রয়োজনে মা খুব একটা কথা বলেন না। পরদিন সকালে বাবর রোড থেকে ছুটেছিলাম গোপালপুরের সেই পাগলের বাড়ি। অনেক বছর সে আমায় বাবা বলে ডাকে। পাঁচ-সাত বছর আগেও ওদিকে মিটিংয়ে গেলে সবখানেই তাকে দেখেছি। হেমনগর ঝাওয়াইলের মাঝে তার বাড়ি। গিয়ে দেখি ১ বা ২ ডিসেমল জমির ওপর ১০-১২ হাত লম্বা দোচালা শোলার বেড়ার একটা টিনের ঘর। পাশেই ছয়-সাত হাত একটা রান্নাঘর, ওপরে খড়ের চাল। কোনো বেড়া নেই। মা, বউ, ১ ছেলে, ১ মেয়ে নিয়ে তার বাস। মুক্তিযুদ্ধের পর যেখানেই গেছি সেখানেই হাজাারো মানুষ, সেদিনও হয়েছিল। চলে এসেছিলাম সন্ধ্যার পরপর। তখন এখনকার মতো ভালো গাড়ি-ঘোড়া ছিল না। গাড়িতে এসির কথা তো কল্পনাও করা যেত না। রাস্তা খারাপ, ক্যানভাসে হুড লাগানো গাড়ি গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু তবু এখনকার চেয়ে সময় কম লাগত। কারণ রাস্তাঘাটে দোকানপাট ছিল না, ছোট গাড়ি-ঘোড়ার উপদ্রব ছিল না। একবার হর্ন দিলে ৫০০ গজ পরিষ্কার হয়ে যেত। ঢাকা ফিরে কেবলই বারান্দায় বসেছি, মা এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কীরে বজ , কী দেখলি? তোর ওই পাগলের বাড়ির চেয়ে এ বাড়ি কি খুব খারাপ?’ আমি খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম। বলেছিলাম, উত্তর পেয়ে গেছি। আর বাড়ি বদল করিনি। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে ভাগ্যই আমাকে বদলে দিয়েছিল। ১৬ বছর নির্বাসিত থেকে আবার ’৯০-এর ২০ ডিসেম্বর বাবর রোডের বাড়িতে এসেছি। বাড়ির সামনে মা দুটি নারকেল গাছ বুনেছিলেন। এখন আমি যখন বারান্দায় বসি গাছগুলোর শাখা ঝিরঝির করে দোলে। আমার সারা গায়ে মায়ের আঁচলের পরশ বুলিয়ে দেয়। এখন আর এ বাড়ি আমার অপছন্দ নয়, বরং খুবই পছন্দ। অনেকটাই কোরআনের আয়াতের বেহেশতের মতো। দুর্ভাগ্য ৫ কাঠার খুপরি বাড়ি ২০০৪-০৫ সালে ভাঙাভাঙি করে কিছুটা ধুপদুরস্থ করেছি। কিন্তু তা এখনো বৈধ নয়। সরকারি তালিকায় অবৈধ। জানি না বৈধ দুনিয়া থেকে অবৈধ বসবাসকারী হিসেবে কবে পাড়ি জমাব। একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায় নিজেও কিছুটা রক্ত ছিটিয়ে জাতির পিতার বরাদ্দ বাড়িতে এখনো বৈধ হতে পারিনি— এই যা দুঃখ।

শৌর্য-বীর্যের আধার সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের বাংলাদেশ। সেই দেশ দুঃখ-দৈন্য-দরিদ্রতা-ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে আছে। ভিখারির কোলাহলে রাস্তায় চলা মুশকিল। যখন শুনি বীর মুক্তিযোদ্ধারা রিকশা চালায়, ভিক্ষা করে বুক ফেটে যায়। অতিসম্প্রতি ভিক্ষার আরেক নগ্ন চেহারা দেখলাম। খুলনা পাটকলের শ্রমিকরা ভিক্ষার পাত্র হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে তাদের জন্য হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে যা রক্ষা করেছেন। দেশের গর্ব কৃষক-শ্রমিক, দেশের গর্ব ছাত্র-যুবক, তারা আজ কোথায়। তাদের প্রকৃত সম্মান না থাকলে জাতির গর্ব করার কী থাকে? কিছুই না।

২ বৈশাখ হঠাৎই একজন প্রবীণ সাংবাদিক, নানা গুণে গুণান্বিত, বয়সী মানুষ শফিক রেহমানকে ভাগ্নে জয়ের অপহরণ এবং হত্যার পরিকল্পনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। শফিক রেহমানের মতো একজন প্রবীণ মানুষকে নাজেহাল করা যেমন সমর্থন করা যায় না, ঠিক তেমন বঙ্গবন্ধুর নাতি প্রিয় ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবনের প্রতি কোনো হুমকি মেনে নেওয়া যায় না। শফিক রেহমানের অনেক গুণ। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি লন্ডনে ‘স্পেকট্রাম’ নামে রেডিও চালু করেছিলেন, যা বাঙালিদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার সম্পাদিত ‘যায়যায়দিন’ একসময় স্বৈরাচার এরশাদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। একটা ছোট্ট সাপ্তাহিক অত জনপ্রিয় হতে পারে কল্পনা করা যায় না। বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকায় শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কণ্ঠ একসময় আমাদের গর্বের বিষয় ছিল। যেহেতু মাটি খুঁড়ে বের হইনি, আকাশ ভেঙে পড়িনি, তাই অনেক কিছুই জানি। শফিক রেহমানকে বঙ্গবন্ধু ভীষণ স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। শফিক রেহমানের বাবা বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। তাই শফিক রেহমান কোনো কিছুতে জড়িয়ে থাকলে তাকে রেহাই দেওয়া হোক এটা যেমন চাইব না, তেমন প্রিয়তমা ভগ্নি জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে না থেকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আছেন বলে তিনি নিগৃহীত হোন, অপমান-অপদস্থ হোন, তালেয়া রেহমানের দীর্ঘশ্বাসে আকাশ-বাতাস ভারী হোক এটাও কামনা করি না। সদাশয় সরকারের কাছে আমার নিবেদন, সারা দেশে যে দাবদাহ চলছে অনেক কিছুই প্রাকৃতিক উত্তাপে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় যখন জাতীয় শান্তি, সুস্থিতির বেশি প্রয়োজন তখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরও উত্তাপ সৃষ্টির কোনো মানে হয় না। মানুষের না হয়ে শুধু পুলিশি রাষ্ট্র হলে আমাদের জন্য পরিণতি ভালো হবে না।-বিডিপ্রতিদিন

লেখক : রাজনীতিক
১৯এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে