মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৫৩:১১

বড় ধরনের গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে দুদক

বড় ধরনের গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে দুদক

নিউজ ডেস্ক : বড় ধরনের গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন মামলায় জামিন না নিয়ে পলাতক রয়েছেন এমন আসামিদের গ্রেফতারেই শুরু হয়েছে এ অভিযান। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিনিয়র কর্মকর্তা, ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যবসায়ী, সেবা সংস্থার প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এলজিইডি, রাজউকের প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ, তিতাস, ওয়াসাসহ সেবা খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা, অর্থ আত্মসাৎকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুই শতাধিক এজাহারভুক্ত আসামি। দুদকের একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এ অভিযানের তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ৪৭৮টি মামলা দায়ের করে দুদক। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছেন ৮শ’র মতো। এর বাইরেও নতুন-পুরাতন এবং আদালত, থানা ও বিভিন্ন দফতর থেকে তদন্তের জন্য আসা বিভিন্ন ধারায় দায়ের হওয়া প্রায় ২০ হাজার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুদকের দায়ের করা নিজস্ব মামলা রয়েছে ৩ হাজারের মতো। এসব মামলায় আসামি রয়েছেন কয়েক হাজার। এসব আসামির অনেকেই জামিন না নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়াকে নানাভাবে প্রভাবিত করে দীর্ঘদিন থামিয়ে রেখেছেন তদন্ত। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা। কিছু প্রভাবশালী আসামি রয়েছেন যে কোনো মুহূর্তে দেশ ছাড়তে পারেন। এতে তদন্ত বিলম্বিত হয়। নির্বিঘ্নে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রভাবশালী আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে দুদক ইতিমধ্যে ৩০ জনের বেশি এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এরপরই নতুন-পুরাতন এজাহারভুক্ত অনেক আসামি গা ঢাকা দেন।

সর্বশেষ সোমবার পৃথক দুর্নীতি মামলায় ঢাকা, সিলেট, বগুড়া ও দিনাজপুর থেকে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে দুদক। এরা হলেন শিক্ষা অধিদফতরের সিস্টেম এনালিস্ট আবুল ফজল, ঢাকা সদর রেকর্ড রুমের সাবেক সাবরেজিস্ট্রার ভবতোষ ভৌমিক, হবিগঞ্জ হযরত শাহজালাল (র.) সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার হারুনুর রশিদ, সোনালী ব্যাংকের ময়মনসিংহের ভালুকা শাখার সাবেক ম্যানেজার আসাদুজ্জামান, একই শাখার কর্মকর্তা একরামুল হক খান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা প্রকল্পের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম, বগুড়ার কাহালুর বেলঘড়িয়া হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটির বিদ্বৎসাহী সদস্য আল আমিন এবং দিনাজপুর দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এসব আসামি পলাতক ছিলেন।

সূত্র মতে, আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলায় আসামি ১৫৬ জন। এর মধ্যে আছেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামসহ ১৭ জন কর্মকর্তা। ৮২ জন ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। ১১ জন সার্ভেয়ার। এর মধ্যে মাত্র তিনজন ঋণ গ্রহীতা এবং পাঁচজন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ১৪৮ জনকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে তাদের গতিবিধি কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এজাহারভুক্ত কোনো আসামি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে জন্য ৫৬টি মামলার আসামিদের নাম-ঠিকানা ও মামলার তথ্য উল্লেখ করে ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ৬ তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্ভাব্য অভিযানে জোর চেষ্টা চালানো হবে বেসিক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের। ইতিমধ্যে তার যশোরের কাজীপাড়ার বাসা এবং ধানমণ্ডির এফ-১, ২ গ্রিন কর্নার রোডের বাসায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয় দুদক টিম। গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে আলোচিত এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) এ মোনায়েম খান, উপ-ব্যবস্থাপক এসএম জাহিদ, ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ, রিলেশন্সশিপ ম্যানেজার পলাশ কুমার দাসগুপ্ত, এজিএম আবদুস সাত্তার খান, সাবেক জিএম মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাবেক এজিএম আবদুস সবুর, ডিজিএম কোরবান আলী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোর্শেদ, সাবেক জিএম গোলাম ফারুক খান। এজাহারভুক্ত না হলেও তদন্তের প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হতে পারে বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকেও।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এসব মামলায় ডিএমডি ফজলুস সোবহান, মো. সেলিম, জিএম শিপার আহমেদ, জিএম জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, ইকরামুল বারীকে গ্রেফতার করা হয়। ঋণ গ্রহীতা হিসেবে গত ২৮ মার্চ গ্রেফতার করা হয় এমারেল্ড অটো ব্রিকফিল্ডসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব, মেসার্স ফারসি ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফয়জুন্নবী চৌধুরী, এশিয়ান শিপিং বিডির মালিক আকবর হোসেনকে। গ্রেফতারের এ তালিকা এখন দ্রুত বড় হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংক ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের অর্ধশত এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছেন গ্রেফতারের তালিকায়। এর মধ্যে সোনালি ব্যাংকের এনসিটিভি শাখার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও রফতানি শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পিলুসিড টেক্সটাইলের নামে ঋণ নিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের এ মামলায় অবসরে যাওয়া নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক, মফিজুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি মামলায় ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক ৯ কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংক থেকে ২৫১ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ডিএমডি মনজেরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ অফিসার মসিউর রহমান, এএসএম জহুরুল ইসলাম, এজিএম শামীম আহমেদ খান, অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলায় মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানউজ জামান, জালিয়াতির মামলায় রাজউকের ওয়ার্ক-চার্জড কর্মচারী এমএকে খন্দকার (আজাদ), বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সচিব আবুল বশর, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক রূহুল আমিন খাদেমকে এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে দুদকের একটি সূত্র জানায়, এসব আসামির কেউ কেউ ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে রেখেছেন। জামিনের প্রমাণ দেখাতে না পারলে গ্রেফতার করা হবে।

গ্রেফতার অভিযান সম্পর্কে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত একজন পরিচালক জানান, পুরনো এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা রয়েছে। নতুন যেসব মামলা হবে সেগুলোতেও গ্রেফতারের নির্দেশনা আছে।

এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে গ্রেফতার টিমের প্রধান দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, তদন্ত কার্যক্রমে দুদক কর্মকর্তারা স্বাধীন। তদন্ত প্রক্রিয়ায় তারা যদি মনে করেন এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন, তিনি গ্রেফতার করতেই পারেন। মামলা হবে অথচ আসামিরা আইনকে শ্রদ্ধা না দেখিয়ে, জামিন না নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াবেন- এটি চলতে পারে না। এ কারণে হয় আসামিকে জামিন নিতে হবে না হয় গ্রেফতার করা হবে। তদন্ত কার্যক্রমে গ্রেফতার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।-যুগান্তর
 
১৯এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে