বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:১৯:৪৫

বিএনপি নেতাদের টালবাহানা, তৃণমূল স্তরে ক্ষোভ

বিএনপি নেতাদের টালবাহানা, তৃণমূল স্তরে ক্ষোভ

হাবিবুর রহমান খান : বিএনপিতে ‘এক নেতার এক পদ’-এর বিধানটি শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। নতুন মহাসচিব অতিরিক্ত পদ ছাড়লেও অন্য নেতারা সেদিকে হাঁটছেন না। ফলে নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে দলের গঠনতন্ত্রে যুক্ত হওয়া বিধানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে।

এ নিয়ে তৃণমূলসহ সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ ও হতাশা। নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের অতিরিক্ত পদ ছাড়তে দলের হাইকমান্ড থেকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কেউ পদ না ছাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরাও।

হাইকমান্ডের চাপের বিপরীতে একাধিক পদ দখলে রাখা নেতারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, চেয়ারপারসন বিশেষ বিচেনায় কাউকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অতিরিক্ত পদে রাখতে পারবেন- এ বিধানটিও গঠনতন্ত্রে বহাল আছে। এই বিশেষ সুযোগকে কাজে লাগিয়েও তারা একাধিক পদ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধানটি সংযোজন করা হয়।

এ ধারায় বলা হয়েছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। আর নির্বাহী কমিটির কোনো নেতা জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ দুই পদে থাকতে পারবেন না। একইভাবে যারা জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন, তারা অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। তবে চেয়ারপারসন বিশেষ বিবেচনায় কোনো নেতাকে তার মূল পদের বাইরেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব দিতে পারবেন।

১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ১০ দিন পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব ও রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ তিনজনের নাম ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্রের নতুন বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার দু’দিন পর ২ এপ্রিল কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। অথচ নতুন নির্বাহী কমিটির ঘোষিত যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের বেশিরভাগই বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে রয়েছেন। সোমবার ঘোষিত সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যেও অনেকের অতিরিক্ত পদ রয়েছে। কেউই এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত পদ ছাড়েননি।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতৃত্বের বিকাশ ও নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ‘এক ব্যক্তির এক পদ’ নীতি গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হয়েছে। এখন এটি বাধ্যতামূলক। অন্য নেতারা যাতে নিজ উদ্যোগে দ্রুত অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দেন সে জন্য শুরুতেই তিনি অতিরিক্ত পদ ছাড়েন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, একাধিক পদে থাকা নেতারা গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদগুলো ছেড়ে দেবেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি চূড়ান্ত করা হলেও সেখানে কিছু ফাঁকফোকর আছে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে নতুন বিধানটি কার্যকর করা নিয়েও চলছে ধোঁয়াশা। অতিরিক্ত পদধারী নেতারা তাদের সুবিধামতো এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাদের মতে, ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন যেসব কমিটি হবে সেখানে কেউ একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। তবে দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক জানান, গঠনতন্ত্রে নতুন বিধানটি পাস হওয়ার পর থেকেই কার্যকর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কারও অতিরিক্ত পদ ধরে রাখার সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, গঠনতন্ত্রে সংযুক্ত এ ধারাটি অবশ্যই কার্যকর হবে। নতুন বিধান হওয়ায় তা কার্যকরে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনার অজুহাতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিশেষ পরিস্থিতিতেই তিনি এ দায়িত্ব দেবেন এবং তা প্রকাশ্যেই।

আগের নির্বাহী কমিটির প্রায় সব নেতারই একাধিক পদ রয়েছে। নতুন কমিটিতে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে, দু-একজন ছাড়া সবারই একাধিক পদ রয়েছে। নতুন যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর ও খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলার সভাপতি। লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট, নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে আছেন। ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে নতুন যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, এক নেতার এক পদ গঠনতন্ত্রে পাস হলেও সেখানে একটা ‘ব্র্যাকেট’ রয়েছে। চেয়ারপারসন ইচ্ছা করলে কাউকে অতিরিক্ত পদে রাখতে পারেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে কোথায় রাখবেন। তবে মূল কথাটা হচ্ছে যাকে যেখানেই দায়িত্ব দেয়া হোক ঠিকমতো কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে কিছু নেতা আছেন যারা জেলা এবং কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অথচ এলাকায় না গিয়ে ঢাকায় বসে থাকেন। একাধিক পদ ধরে রাখার ফলে যদি দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বলেন, ‘বরিশাল মহানগরে আমার থাকার ইচ্ছা নেই। তবে এলাকার নেতাকর্মীরা আমাকে থাকার অনুরোধ করছেন। তারা মনে করছেন, বরিশালে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হলে আমার বিকল্প নেতৃত্ব নেই।’

খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, চেয়ারপারসনের হাতে আলাদা অপশন আছে। তিনি চাইলে কাউকে একাধিক পদে রাখতে পারবেন। তাই চেয়ারপারসন যদি সিদ্ধান্ত নেন অন্য পদ ছাড়তে হবেই, তখন চিন্তাভাবনা করে দেখবেন তিনি।

যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। গঠনতন্ত্রের বাইরে তিনি কিছু করবেন না। তবে চেয়ারপারসন চাইলে যে কাউকে রাখতে পারেন সে সুযোগ গঠনতন্ত্রেই আছে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর নরসিংদী বিএনপি বড় ধাক্কা খায়। এখনও সাংগঠনিকভাবে দল গুছিয়ে আনা যায়নি। জেলার সাংগঠনিক কাজগুলো ঠিকঠাক করতে কিছুটা সময় লাগবে। -যুগান্তর

২০ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে