বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:০৭:২৫

৫২ দিন পর ‘নির্মম সত্য’ জেনে অঝোরে কাঁদল শিশু জারিফ

৫২ দিন পর ‘নির্মম সত্য’ জেনে অঝোরে কাঁদল শিশু জারিফ

রফিকুল ইসলাম : গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৫২ দিন দুঃসহ যন্ত্রণায় হাসপাতালে কেটেছে শিশু জারিফের। এখনো অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারছে না। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই এক ভীষণ নির্মম সত্যের মুখোমুখি হতে হলো তাকে। সোমবার প্রথমবারের মতো সে জানল, একই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ তার বাবা, মা ও দুই ভাই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। পরে তার ইচ্ছাতেই নিয়ে যাওয়া হলো প্রিয়জনদের কবরের পাশে। সেখানে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে বুক ভাসাল ১১ বছর বয়সে ‘একা’ হয়ে যাওয়া এই শিশু।

পুরো নাম জারিফ বিন নেওয়াজ। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আগুনে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুড়ে যায়। পুড়েছে ডান হাত আর বাঁ পায়ের নিচের অংশও। ডান হাত ও পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে জানত, তার বাবা, মা ও দুই ভাইকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর বাড়ির সাততলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন জারিফরা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তার মা সুমাইয়া খানম রান্নাঘরে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই গ্যাসের বিস্ফোরণে সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে জারিফ, তার বাবা মার্কিন দূতাবাসের প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ (৫০), মা, বড় ভাই সালীন (১৫) ও ১৪ মাস বয়সী ফুটফুটে ছোট ভাই জায়ান দগ্ধ হয়। অর্থাৎ আগুনে পুড়ে যায় পুরো পরিবার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পরপরই মারা যায় তার দুই ভাই। এক দিন পর মারা যান বাবা। শরীরের ৯০ শতাংশ পোড়া নিয়ে কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান মা সুমাইয়া (৩৫)। সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছে কেবল জারিফ।

বরিশাল নগরীর নবগ্রাম এলাকায় জারিফের নানা বাড়ি। তার মা ও দুই ভাইকে কবর দেওয়া হয়েছে বরিশালের মার্কাস মসজিদ গোরস্তানে। আর তার বাবাকে কবর দেওয়া হয়েছে ঝালকাঠিতে দাদা বাড়ির কবরস্থানে।

জারিফের মামা হামীম জানান, পরিবারের সবাই মারা গেছে, বিষয়টি জারিফ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না ভেবেই এত দিন বিষয়টি চেপে রাখা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সোমবার ঢাকা থেকে তাকে বরিশাল নিয়ে আসা হয়। সোমবার বিকেলে তাকে জানানো হয় সেই নির্মম সত্যটি। পরে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও দুই ভাইয়ের কবরের পাশে। তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জারিফ শুধু অঝর ধারায় কেঁদেছে। তার কান্না দেখে আশপাশের কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। পরে ঝালকাঠিতে তার দাদার বাড়িতে বাবার কবর জিয়ারত করতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এখন জারিফের একমাত্র সঙ্গী বড় চাচা মনিরুজ্জামানের মেয়ে মিথিলা জামান। জারিফকে উদ্ধৃত করে মিথিলা কালের কণ্ঠকে জানায়, দুর্ঘটনার দিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি স্পষ্ট মনে আছে জারিফের। সেই স্মৃতি মনে এলেই সে কেঁদে উঠছে। -কালের কন্ঠ
২০ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে