নিউজ ডেস্ক: ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল বিএনপি। কিন্তু নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের সেই উচ্ছ্বাস যেন ম্লান হতে বসেছে। অতীতে কমিটি ঘোষণার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যেত এবার তেমনটা চোখে পড়ছে না। নতুন কমিটিতে কিছু ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, কারও বেলায় অতি মূল্যায়ন, আবার কেউ কেউ প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় চলছে চাপা ক্ষোভ। নির্বাহী কমিটিতে ভারসাম্য আনতে আরও তিনটি যুগ্ম-মহাসচিব পদ সৃষ্টি করা যায় কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা। কমিটি গঠন নিয়েও সিনিয়র নেতাদের বেশির ভাগই অন্ধকারে। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভিমান করে অনেক সিনিয়র নেতা নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে এ নির্দেশ দেন। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে খালেদা জিয়া দ্রুতই ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা দিতে পারেন। নতুন কমিটিই মহানগরের পুনর্গঠন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটি হওয়ার পর নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ এবং দলে গতি ফেরাতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাজ করে যাচ্ছেন। মহাসচিব হওয়ার পর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে চলতি মাসের প্রথমদিকে একান্তে কথাও বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সঙ্গেও দেখা করে সহযোগিতা চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে দলে কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি।
সূত্র জানায়, ঘোষিত কমিটি নিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। যুগ্ম-মহাসচিব পদে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নাম তিনি প্রস্তাব করেছিলেন। এছাড়া যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে নাদিম মোস্তফা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আবুল খায়ের ভুঁইয়ার নামও আলোচনায় ছিল। ঘোষিত কমিটিতে তাদের কারও নামই যুগ্ম-মহাসচিব পদে নেই। শুধু দুলুকে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। এ নিয়ে মনোক্ষুণ্ণ দুলু সমর্থকরা। বিগত আন্দোলনে হারুন অর রশিদ রাজপথে সক্রিয় না থাকার পরও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ায় রাজশাহী বিভাগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে হারুন তেমন আলোচনায়ও ছিলেন না। দলের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দুলুকে বাদ দিয়ে হারুনকে যুগ্ম-মহাসচিব করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কয়েকজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, কমিটি গঠন বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। গুলশানের বাসায় বসে চেয়ারপারসন কমিটি গঠনের কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তার এক আত্মীয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে এমন কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যাদের বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে দেখা যায়নি। দলের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ কাজ করছেন বলে দলের মধ্যে নানা আলোচনা রয়েছে। ওই নেতারা জানান, রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক করা হয়েছে শামসুজ্জামানকে। তিনি কয়েক বছর আগে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। ব্যবসায়ী হিসেবেই তার পরিচিতি বেশি। সাংগঠনিক কাজের কোনো অভিজ্ঞতা বা নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত না হওয়ার পরও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়। অথচ ওই বিভাগে ছাত্রদলের সাবেক নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদের নাম প্রথমে সহ-সাংগঠনিক হিসেবে থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাদ দেয়া হয়। বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং ফরিদপুর বিভাগে শামা ওবায়েদের নাম থাকায় পুরুষ নেতাদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ মহিলা নেত্রীরাও। এ দু’জনকে অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।
আবার কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে বিলকিস জাহান শিরিনকে। ওই বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু দু’জনই তার সিনিয়র। এ নিয়ে দু’জনই ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে নেতারা অস্বস্তিতে পড়বেন বলে মনে করেন অনেকে।
আবার চট্টগ্রাম বিভাগের দুই নেতার স্থান হলেও তারা ওই পদে থাকতে চাচ্ছেন না। এদের মধ্যে একজন বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রে না থেকে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির শীর্ষ পদে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তার নেতাদের কাকে কোথায় দায়িত্ব দিতে হবে, তার চেয়ে কেউ ভালো বোঝেন না। কাউন্সিলে তাকে দলের নেতারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা তিনি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করছেন। কারও মনে হয়তো কোনো কষ্ট থাকলেও ম্যাডাম ডেকে কথা বলেই ঠিক হয়ে যাবে বলে তার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, একটি পদের বিপরীতে একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছে। বিএনপির মতো বড় দলে এটা থাকাই স্বাভাবিক। তাই বলে সবাইকে তো আর খুশি করা সম্ভব নয়।-যুগান্তর
২২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সবুজ/এসএ