শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৪১:১২

বরের দুই পা পিটিয়ে ভেঙ্গে দিল পুলিশ

বরের দুই পা পিটিয়ে ভেঙ্গে দিল পুলিশ

নিউজ ডেস্ক: বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল আজ, কাল অনুষ্ঠেয় বৌভাতের প্রস্তুতিও ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু গায়েহলুদ অনুষ্ঠানের আগের রাতেই পুলিশি হানায় সব হয়েছে পণ্ড। পুলিশ পিটিয়ে দুই পায়ের হাড় ভেঙে দিয়েছে বর মোহাম্মদ রুবেলের (২৫)। বুধবার রাতে নিষ্ঠুরতার এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দুই এসআই ও চার পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখেছিল ঘটনাস্থলে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌঁছে সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ঘটনাটি গাজীপুর মহানগরীর হায়দারাবাদ পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার। আহত যুবক রুবেলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। পুলিশি নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে গতকাল এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে হায়দারাবাদ-টঙ্গী সড়কে।

স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম হাজীপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম পেশায় কৃষক। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রুবেল টঙ্গীতে একটি কেবল টিভি অফিসে চাকরি করে। রুবেলের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে চলছিল নানা আয়োজন। বাড়ির সামনে তৈরি করা হয়েছিল গেট। অতিথিদের বসার জন্য আনা হয়েছিল চেয়ার-টেবিল। বাজার-সদাইয়ের সঙ্গে কেনা হয়েছিল গরু। গায়েহলুদের আগের রাতে আকস্মিক পুলিশ হানা দেয় ওই বাড়িতে। বর রুবেলকে একটি মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। জয়দেবপুর থানার এসআই আলী আকবর ও এসআই ফিরোজ মিয়া সঙ্গের পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি মামলার বাদীকেও মারপিটের সুযোগ করে দেন। পুলিশের নির্যাতনে একপর্যায়ে রুবেল অচেতন হয়ে পড়লে এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের আটকে ফেলে। রুবেলকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় চিকিৎসার উদ্যোগ।

চিকিৎসার জন্য বুধবার রাতেই রুবেলকে ঢাকায় নেওয়া হয়। জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে তাৎক্ষণিক পাশেই শ্যামলীর জনসেবা নার্সিং হোমে নেওয়া হয়। সেখানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ শামীম তাঁর চিকিৎসা করছেন। চিকিৎসক বলেন, ‘রুবেলের বাঁ পায়ের হাড় তিন টুকরো এবং ডান পায়ের হাড় দুই টুকরো হয়ে আলাদা হয়ে গেছে। তা ছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে রুবেলের পায়ে অপারেশন হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি স্বাভাবিক হাঁটতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।

পুলিশি নির্যাতন প্রসঙ্গে মা জোসনা বেগম (৫০) বলেন, ‘রুবেলের বিয়ে উপলক্ষে বন্ধুরা বাড়ির পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে গান বাজাচ্ছিল। রাত ১টার দিকে এ গান বন্ধ করার জন্য রুবেল কথা বলতে ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন চাচা বাবুল হোসেন। তাঁরা দরজা খুলে বের হতেই পুলিশ জাপটে ধরে। রুবেল হাত ছাড়িয়ে ভয়ে দৌড় শুরু করেন বাড়ির পাশে রেললাইনের দিকে। আর পুলিশ লাঠি হাতে তাঁর পেছনে ছুটতে থাকে। একসময় রুবেলকে ধরে পুলিশ মোটা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। অন্ধকার থেকে রুবেলের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে ছুটে আসে। লাঠির আঘাত ও পুলিশের বুটের লাথিতে রুবেল অচেতন হয়ে পড়েন। তখন রুবেলকে রেখেই পুলিশ চলে যেতে চায়।’

বাবা নুরুল ইসলাম জানান, এলাকার চাল ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও তাঁর ভগ্নিপতি রহিমের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। তাঁরা কয়েক মাস ধরে রুবেলের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ করছিলেন। একাধিকবার কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু প্রমাণ হয়নি। গত সপ্তাহে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে থানায় যান সোহেল রানা। জয়দেবপুর থানার এসআই অজয় কুমার এলাকায় এসে ঘটনা তদন্ত করেন এবং সত্যতা না পেয়ে ফিরে যান। কিন্তু বুধবার রাতে এসআই আলী আকবর রুবেলকে গ্রেপ্তার করতে আসেন এবং জানান, মারপিটের মামলা হয়েছে।

ফুফা নান্নু মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় বিয়ের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ যে অভিযোগের কথা বলে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল, তা সত্য নয়। এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের আটকে রাখলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। তিনি ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় তিরস্কার করেন পুলিশ সদস্যদের।’

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান বিল্লাল বলেন, ‘রুবেলকে মারপিটের সময় এসআই আলী আকবরের সঙ্গে মাদকাসক্ত সোহেল রানা ও রহিম অংশ নিয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশ এভাবে নির্যাতন করে মানুষকে আহত করবে তা মেনে নেওয়া যায় না। খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে পৌঁছে রুবেলদের বাড়িতে দেখি এলাকাবাসীর ভিড়। সেখানে এসআই আলী আকবর, এসআই ফিরোজ ও চার পুলিশ সদস্যকে ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করছে তারা। তখন রুবেল রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিল। এরপর থানা থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) পৌঁছে বিচারের আশ্বাস দিয়ে আটক পুলিশদের নিয়ে যান। তিনি রুবেলের চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যদের বলেন।

বুধবার রাতের এই গ্রেপ্তার অভিযান সম্পর্কে জানতে এসআই আলী আকবর ও এসআই ফিরোজের মোবাইলে কল দেওয়া হলে তাঁরা রিসিভ করেননি। তবে জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ দেখে আসামি রুবেল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দৌড়ানোর সময় রেললাইনে  আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিল। এতে তার পা ভাঙতে পারে।-কালের কন্ঠ

২২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে