বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১৪:০২

ইলিয়াস-কন্যা সাইয়ারার বুকফাটা কান্না

ইলিয়াস-কন্যা সাইয়ারার বুকফাটা কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদ যায় ঈদ আসে, বাবা ফিরে আসে না। সাড়ে তিন বছর ধরে বাবার জন্য এই অপেক্ষা। বাবার জন্য ইলিয়াস-কন্যা সাইয়ারা নাওয়ালের বুকফাটা কান্না আজও থামেনি। তার বিশ্বাস, ‘বাবা বেঁচে আছেন। একদিন না একদিন ফিরে আসবেনই।’ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাওয়াল। মায়ের সঙ্গে সিলেটের বিশ্বনাথে ঈদ কাটাতে ইতিমধ্যেই ঢাকা ছেড়েছেন।

মঙ্গলবার বিশ্বনাথের নিজ বাড়ি থেকে আলাপকালে ছোট্ট সাইয়ারা নাওয়াল নিজের বিশ্বাসের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আব্বু ফিরে আসবে। আমি আব্বুর জন্য অপেক্ষা করছি। আব্বু না আসলে আমার ঈদ ভালো হবে না। আঙ্কেল আব্বুকে ফিরিয়ে দিতে সরকারকে বলে দিন না প্লিজ।’

ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন পূরণে বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব লন্ডনে পড়াশোনা করতে গেছে। ছোট ছেলে লাবিব শারার ও মেয়ে সাইয়ারাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। এখানে অসুস্থ শাশুড়ি রয়েছেন। তার সঙ্গেই ঈদ করব। তা ছাড়া ইলিয়াস ভক্তরাও চান আমি যেন কোরবানির ঈদ বাড়িতে করি। ঢাকায় নিঃসঙ্গতার ঈদও ভালো লাগে না। তাই বিশ্বনাথে ঈদ করতে এসেছি। এখানে ইলিয়াসের নামে বিভিন্ন এলাকায় গরু কোরবানি দিচ্ছে ভক্তরা। তাদের আবেগ আমাকে আলোড়িত করছে। আমিও অপেক্ষায় আছি। আমার বিশ্বাস, স্বামী ফিরে আসবেই।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়ি চালক আনসার আলী নিখোঁজ হন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানী এলাকা থেকে। এরপর কেটে গেল সাড়ে ৩ বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু এখনো তাদের সন্ধান দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থও হন ইলিয়াসপত্নী। কিন্তু আজও ইলিয়াস নিখোঁজের রহস্য উন্মোচিত হয়নি।

এ নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ইলিয়াসের বয়োবৃদ্ধ মা সূর্যবান বিবির। বাবার জন্য সাইয়ারা নাওয়ালও এখন পাগলপ্রায়। বাবার সঙ্গে ঘুমোতে না পারার বেদনায় রাতে কান্না চেপে রাখতে পারেন না ১০ বছর বয়সী সাইয়ারা। ঈদের আগেই বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান সাইয়ারা। ইলিয়াস-কন্যা মহাখালী ডিওএইচএসের একটি স্কুলে। জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবাকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়ে সাইয়ারা নাওয়াল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও কার্ড পাঠিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীকে ইলিয়াস-কন্যা বলেছিল, জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবাকে ফিরিয়ে দিন। ২০১২ সালের মে মাসে ঢাকা সফর করছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তাকেও চিঠি পাঠান সাইয়ারা নাওয়াল। ইংরেজিতে নিজের হাতের লেখা আবেগঘন ওই চিঠিতে সাইয়ারা লিখেছে, ‘অনেক দিন হয়ে গেছে বাবা আমাকে আদর করে চুমু দিয়েছিলেন। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি আমাকে চুমু দিতেন। কিন্তু এখন কেউ নেই। কেউ আমাকে চুমু দেন না। আমার খুব কষ্ট হয়। একা লাগে। বাবাকে ছাড়া এ পৃথিবী আমার কাছে শূন্য। আমি আমার বাবাকে আবার জড়িয়ে ধরতে চাই। তার কাছ থেকে চুমু  খেতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে শিগগিরই আমার বাবা আমার কাছে ফিরে আসবেন। তাই, দয়া করে এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরুন এবং আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করুন। আপনার উজ্জ্বল সাফল্য কামনা করি।’

ইলিয়াস-কন্যা জানায়, সব সময়ই আমার বাবার কথা মনে পড়ে। আব্বু আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন। আমি যা চাইতাম তাই কিনে দিতেন। আমাকে নিয়ে আব্বুর অনেক স্বপ্নও ছিল। রাতে বাবাকে ছাড়া ঘুমুতে গেলে এখনো একাকী মনে হয়। আমার খুব কষ্ট। এদিকে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ গাড়ি চালক আনসার আলীর পরিবারের লোকজনও রয়েছেন চরম হতাশায়। স্বামী নিখোঁজের যন্ত্রণা আর বাবার আদর ও  স্নেহবঞ্চিত শিশুকন্যা চাঁদনীকে নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগমের। তাদেরও অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে