বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬, ০৪:১১:৪২

‘শিক্ষক অপমানের জন্য কি জয় বাংলা স্লোগান’?

‘শিক্ষক অপমানের জন্য কি জয় বাংলা স্লোগান’?

ঢাবি : নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে ওঠবস করানোর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  একাধিক শিক্ষক।  ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা মানববন্ধনে অংশ নেন।

তারা বলেন, শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে ওঠবস করানোর সময় উপস্থিত জনতা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিল।  জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।  আজকে শিক্ষককে অপদস্ত করে জয় বাংলা স্লোগান দেয়া হচ্ছে।  জয় বাংলা স্লোগান কি শিক্ষক অপমানের জন্য?

১৯ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব প্রশ্ন ছুড়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।  দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক  ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আমরা লজ্জিত।  এ ঘটনায় জড়িত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে কোনো সময় না দিয়ে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।  তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।  তার রাজনীতি করার অধিকার নেই।  এ দেশে থাকার অধিকারও নেই তার।  

এ সময় তিনি সংসদ থেকে সেলিম ওসমানকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য স্পিকার এবং জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কারের জন্য আহ্বান জানান।  শ্যামল কান্তি ভক্তকে চাকরিতে বহাল করার জন্যও তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।  

আগামীতে এসব ঘটনা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে  অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বারবার শিক্ষা পরিবার হত্যা, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে।  আমরা এসব ঘটনার আমরা প্রতিবাদ করব না।  এখন থেকে প্রতিরোধ করব।  রাজনীতির নামে নারায়ণগঞ্জে অপশাসন চলছে।  এসব ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, একটি চক্র দেশকে এবং শিক্ষা পরিবারকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।  সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে কারা এদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।  এটা একটা চক্রান্ত।  লেবাস লাগানো হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতির।  এসময় তিনি সেলিম ওসমানকে পদত্যাগের দাবি করেন।

ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় জাতীয় সংসদে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে হবে।  তার সদস্যপদ বাতিল করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, একজন সাংসদ আইন প্রণয়নে দিকনির্দেশনা দেন।  একজন মানুষ গড়ার কারিগরকে অপদস্ত করে জঘন্য কাজ করেছেন তিনি।  ইসলামকে নতুন করে আবিষ্কার করা হচ্ছে।  মিথ্যা উক্তিকে কেন্দ্রকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে জীবিত অবস্থায় মৃত করে রাখা হয়েছে।

অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, এ ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত।  একজন শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার দৃশ্য দেখার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।  এ স্বাধীন আমরা চায়নি।

তিনি বলেন, তিনি চাকরি ফিরে পেলেও আত্মসম্মান কি আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব? আমরা সেলিম ওসমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

অধ্যাপক  ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, সেলিম ওসমান জনপ্রতিনিধি থেকে জনদস্যুতে পরিণত হয়েছেন।  শিক্ষক পরের কথা, একজন সাধারণ মানুষকে এভাবে অপমান করার দায়ে অভিশংসন প্রস্তাব আনার জন্য স্পিকার এবং সংসদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ নিজামুল হক ভূঁইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. অসীম সরকার, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মশিউর রহমান, সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান প্রমুখ।
১৯ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে