শনিবার, ২১ মে, ২০১৬, ১২:৫৩:৩৬

মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’: যে কোন সময় হানবে আঘাত, উপকূলে জলোচ্ছ্বাস

মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’: যে কোন সময় হানবে আঘাত, উপকূলে জলোচ্ছ্বাস

নিউজ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। এটি পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরও পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে দুপুরের পর চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটাসহ উপকূলে ভারী বৃষ্টি ঝরছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাজধানীতেও শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার ভোর থেকেই দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি চলছে আগের দিন থেকেই।

শেষরাতে ঘরের উপর গাছ পড়ে ভোলার তজুমদ্দিন, পটুয়াখালীর দশমিনা এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল  স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই ৭ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯ টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮  কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সে সময় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে ঝড়ো হাওয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

অতি ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও শঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে খারাপ আবহাওয়ার কারণে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ। সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল যে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেই ঝড়ে বাতাসের ছিল ঘণ্টায় দেড়শ মাইলের বেশি। পঞ্চম ক্যাটাগরির ওই সাইক্লোনকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে