নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’; দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। তারপরেও সর্বশেষ অন্তত ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও খনেক। কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্নিঝড়ে আপনি কি করবেন, তা জানেন কি?
আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি ও এর বিপদ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা রাখার পাশাপাশি ঝড় আঘাত আনার সময়ের করণীয় সম্পর্কে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হতে পারে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
# ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস প্রবণ বাংলাদেশে মূলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।
# এ সময়ে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে। ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল, আকষ্মিক বন্যা ও ভূমিধস ঘটতে পারে।
# ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ইতোমধ্যে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলের খবর পাওয়া গেছে শ্রীলঙ্কা থেকে।
ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জনসচেনতা তৈরির পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা প্রচার, নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা এবং উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ শুরুর পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
>> ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ও গতিপথ অনুযায়ী বন্দরগুলোতে জারি করা হয়েছে বিপদ সংকেত।
>> আগের দিন থেকেই আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় সাগর ও নদীতে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
>> মাছধরা নৌকা ও ট্রলার এবং মালবাহী লঞ্চের মাঝিমাল্লা ও মালিকদের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরতদের নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক বার্তা জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
>> ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এমন সম্ভাব্য এলাকা স্বাভাবিকের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বসে প্লাবিত হয়। সুতরাং নিচু এলাকায় পাকা দালানে থেকেও বিপদ হতে পারে। সুতরাং কর্তৃপক্ষ সংকেত দেওয়ার পর সরে যেতে বললে দেরি না করে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়া উচিৎ।
>> উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের আগে পাঠাতে হবে।
>> আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় টর্চ লাইট, দেশলাইসহ মোমবাতি, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
>> ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ বা কেন্দ্র উপকূলীয় এলাকা দিয়ে অতিক্রমের সময় কিছুটা সময় সব শান্ত হয়ে আসে। তখন ঝড় শেষ ভেবে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়া যাবে না, কারণ ‘চোখ’ পেরিয়ে গেলে আবারও আগের শক্তি নিয়ে তাণ্ডব চালায় ঝড়। সুতরাং ঝড় সরে যাওয়ার বা থেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিৎ হবে না।
>> ঘূর্ণিঝড় প্রচুর বৃষ্টি ঝরায়। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় মাটি সরে গিয়ে সৃষ্টি হতে পারে ভূমিধস, সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢল। এ কারণে পাহাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি:
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে ‘চোখ’ বলে। আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি দুর্যোগপূর্ণ থাকে ওই ‘চোখ’ এর চারদিকের এলাকায়। ওই এলাকাকে বলে ‘চক্ষুপ্রাচীর’।
যে মেঘবলয় কুণ্ডলী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তাকে কুণ্ডলীগত বৃষ্টিবলয় বলা হয়। এগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ডান-চতুর্থাংশে অতি ভারি বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং এমনকি কি টর্নেডোও সৃষ্টি করে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের যেখানে কম মেঘ থাকে, সেখানে অনেক সময় ১০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ঝড়ের ‘চোখ’ দেখা যায়। এ ‘চোখ’ অতিক্রমকালে সাময়িকভাবে অতি হালকা বৃষ্টিপাত ও সামান্য বাতাসসহ আবহাওয়া শান্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে।
‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোকে পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় অন্তত এক ডজন উপকূলীয় জেলার ৩৫টি উপজেলার ৩২২টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে আশ্রয় কেন্দ্রে।
ঘূর্ণিঝড়ের আবহাওয়া, ঝড়ের শ্রেণি বিন্যাস ও নিরাপদ ব্যবস্থার বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তা গণমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। -বিডিনিউজ
২১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম