রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ০১:৪৫:১২

কবে হবে বিএনপির কমিটি কেউ জানেন না

কবে হবে বিএনপির কমিটি কেউ জানেন না

শফিউল আলম দোলন: বিএনপির স্থায়ী কিংবা পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি কবে ঘোষণা করা হবে কেউ কিছু জানেন না। বলতে পারেন না মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য পর্যন্ত। কমিটি ঘোষণা নিয়ে মহাসচিবের বক্তব্য হলো দলের জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলররা চেয়ারপারসনকে এ বিষয়ে একক ক্ষমতা দিয়েছেন। কাজেই কমিটি ঘোষণার ব্যাপারটি এখন শুধু তারই এখতিয়ার। তবে সময় হলে অবশ্যই তিনি তা ঘোষণা করবেন। জানা যায়, ১৯ মার্চের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য এককভাবে ক্ষমতা অর্পণ করা হয় দলীয় প্রধানকে। এরপর চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে তিন দফায় মহাসচিবসহ ৪২ জন কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। গঠন করা হয়নি দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

কমিটি ঘোষণায় এই দীর্ঘসূত্রতায় দিন দিন জটিল হচ্ছে দলের পরিস্থিতি। তিন দফায় মহাসচিবসহ ৪২ জন কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। গঠন করা হয়নি দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি ঘোষণায় এই দীর্ঘসূত্রতায় দিন দিন জটিল হচ্ছে দলের পরিস্থিতি। তিন দফায় আংশিক কমিটি ঘোষণার পর উজ্জীবিত হওয়ার পরিবর্তে দলে নেমে আসছে স্থবিরতা। জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের সর্বময় ক্ষমতা অর্পণের পর দুই মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারছেন না দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের পারস্পরিক বিরোধ, অবিশ্বাস, গুলশান কার্যালয়ের বিতর্কিত ও অস্বাভাবিক ক্ষমতাধর এক কর্মকর্তাসহ নয়াপল্টনের জনৈক নেতার পদ-পদবি নিয়ে বাণিজ্য, নানা অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে একাধিক বার উদ্যোগ নেওয়ার পরও কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে দলের প্রবীণ নেতাদের অবিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদেরকে অন্ধকারে রাখাটাও এর একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

তাছাড়া চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতা এবং নতুন মহাসচিবকে পুরোপুরি সাংগঠনিক ক্ষমতা না দিয়ে অন্ধকারে রাখাসহ কৌশলে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করাটাও নতুন কমিটি গঠনে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কী কারণে কমিটি হচ্ছে না, তা তারা কেউ-ই জানেন না। তবে সবাই কমিটি গঠনে এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে দলের পরিস্থিতি দিন দিন জটিল থেকে আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের দুই মাস পরও এর সুফল ঘরে তোলা যায়নি। কারণ এখনো স্থায়ী কমিটিসহ দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্প্রতি বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়ায় লেখালেখির অর্ধেক কারণই হচ্ছে কমিটি গঠনের এই দীর্ঘসূত্রিতা। একই কারণে কমিটি গঠনে পদ-পদবি নিয়ে বাণিজ্যেরও সুযোগ পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি। যার ফলে দলের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং হচ্ছে। তারপরও তিনি আশা করেন, চেয়ারপারসন যতদ্রুত সম্ভব দলের স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবেন।

তবে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কমিটি গঠনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এটি সম্পূর্ণ চেয়ারপারসনের এখতিয়ার। ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের অধিবেশনে তার (ড. মোশাররফ) উত্থাপিত প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমেই উপস্থিত (প্রায়) তিন হাজার কাউন্সিলর দলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর একক ক্ষমতা অর্পণ করেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটির সিনিয়র নেতারা, এমনকি চেয়ারপারসনের কোনো উপদেষ্টা পর্যন্তও জানেন না কিছু। উপেক্ষিত হচ্ছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাঠানো নির্দেশনাও। এক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন হলো তাহলে জানে কে? নির্বাহী কমিটির ঘোষিত ৪২ জন নেতার নামের তালিকা-ই বা কারা তৈরি করেছেন? সন্দেহের তীর ঘুরেফিরে সেই নয়াপল্টনের একজন নবউত্থিত প্রভাবশালী নেতা আর চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একজন ক্ষমতাধর কর্মকর্তার দিকেই যাচ্ছে। যাদের কারণে সারা দেশে দলের সর্বস্তরের বহু নেতা-কর্মীই আজ নিজেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত মনে করছেন। কতিপয় ব্যক্তির সেই দুর্বৃত্তায়নের শিকার আজ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের লাখো নেতা-কর্মী। কমিটি নিয়ে আজ তাদের প্রশ্ন কী কারণে বেগম খালেদা জিয়া সুনির্দিষ্ট এত অভিযোগ ওঠার পরও বছরের পর বছর ধরে তার কার্যালয়ে দুধ দিয়ে এসব ‘কাল সাপ’ পুষছেন? যাদের বিরুদ্ধে কোনো স্তরের কোনো মানুষই খারাপ ছাড়া ভালো বলছেন না।

বিএনপির অনেক নেতা এসব ব্যক্তিকে সরকারের খাস ‘এজেন্ট’ বলেও উল্লেখ করছেন। দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা জানান, দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ অনুসারে এখন আর সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে না। গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ তিন নেতা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনাও এখন অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে না। নানা মিথ্যা অভিযোগে চেয়ারপারসনের সঙ্গে প্রবীণ নেতাদের অবিশ্বাসের দেয়াল তুলে রেখেছেন গুলশান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা। এদিকে জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে ম্লান হতে চলেছে। তিন দফায় নির্বাহী কমিটির ৪২ জন নেতার নাম ঘোষণার পর একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। ঘোষিত কমিটিতে কারও কারও ক্ষেত্রে অতিমূল্যায়ন, সিনিয়রিটি লঙ্ঘন, পদ-পদবি নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগে ইতিমধ্যেই দলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কাউন্সিলের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি দলটি।

দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, রাজপথে আন্দোলনই বিএনপির মূল লক্ষ্য হলেও বিভিন্ন কারণে আন্দোলনের সেই টিম গোছাতে পারছে না বিএনপি। তবে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় এবং নয়াপল্টন কার্যালয়ের যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে তাদের অতিসত্বর এসব স্থানসহ দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত। অন্যথায় দল গোছানোর মাধ্যমে রাজপথের আন্দোলনের প্রকৃত প্রস্তুতি নেওয়া কখনোই সম্ভব হবে না।-বিডি প্রতিদিন

২২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে